ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

জানেন কি কাবা গিলাফের রহস্য?

আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম

হিজরি বছরের নতুন চাঁদ দেখে এশার নামাজের পর থেকে শুরু হয় পবিত্র কাবাঘরের কিসওয়া বা গিলাফ পরিবর্তনের কাজ। আরবরা কাবা শরিফকে আবৃত করে রাখা কাপড়কে বলে ‘কিসওয়া’ আর আমরা বলি গিলাফ। এটি একটি ঐতিহাসিক পরম্পরা। কাবা শরিফের গিলাফ একটি বস্ত্রখণ্ড যা দ্বারা কাবাকে আচ্ছাদিত করে রাখা হয়। বর্তমানে গিলাফ কালো রেশমি কাপড় নির্মিত, যার ওপর স্বর্ণ দিয়ে লেখা থাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ’, ‘আল্লাহু জাল্লে জালালুহু’, ‘সুবহানাল্লাহু ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম’ এবং ‘ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান’।

কাবাঘরে গিলাফ মোড়ানোর ইতিহাস 
ইতিহাসের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইসলাম পূর্ব সময়ে ইয়েমেনের বাদশাহ তুব্বা আবি কারব আসাদ সর্বপ্রথম কাবা শরিফকে গিলাফ দিয়ে ঢাকেন। এজন্য তিনি ইয়েমেনের কাপড় ব্যবহার করেছেন। পরবর্তীতে মক্কা বিজয় হলে বিশ্ব নবী ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ কাবাকে লাল ও সাদা  কাপড়ে ঢেকে দেন।

এরপর বিভিন্ন সময়ে সাদা রঙের গিলাফ, লাল গিলাফ, হলুদ গিলাফ ও সবুজ গিলাফ ব্যবহার করা হয়েছে। আর এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কালো গিলাফ।

তবে পবিত্র এই গিলাফ তৈরি করা মোটেও সহজ কাজ নয়। বহু দক্ষ কারিগর ও প্রযুক্তিবিদের নিখুঁত প্রচেষ্টায় এই গিলাফ তৈরি হয়। এটি তৈরিতে যেমন অনেক দক্ষ কারিগর প্রয়োজন হয় তেমনি অনেক সময়েরও ব্যাপার। এ গিলাফের আর্ট ও সোনার সুতায় বোনা ক্যালিওগ্রাফি মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে তৈরি হয় ভালো লাগা, ভালোবাসা ও অনুভূত হয় অন্যরকম এক মায়াবী আকর্ষণ।

কাবার গিলাফ তৈরির প্রতিষ্ঠান
প্রায় একশ বছর ধরে কাবার গিলাফ তৈরি করে আসছে কিং আব্দুল আজিজ কমপ্লেক্স। এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু এই কিসওয়া তৈরি করে থাকে। ১৯২৮ সালে কিসওয়া ফ্যাক্টরি নামে এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। তবে ২০১৭ সালে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আব্দুল আজিজের স্মরণে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে কিং আব্দুল আজিজ কমপ্লেক্স রাখা হয়। 

প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি জেনারেল প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ বিন সাইদ আল মালিকি বলেছেন, কালের পরিক্রমায় আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে বহু উন্নয়ন হয়েছে। যেমন প্রথাগত মানব শ্রম নির্ভর থেকে এখন প্রতিষ্ঠানটি পুরো স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমে চলে।

গিলাফ তৈরির হিসাব
* নতুন গিলাফ তৈরি করতে ১২০ কেজি সোনার সুতা, ৭০০ কেজি রেশম সুতা ও ২৫ কেজি রুপার সুতা লাগে।
* গিলাফটির দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার এবং প্রস্থ ৪৪ মিটার।
* গিলাফের সেলাই কাজে অংশগ্রহণ করে দেড় শতাধিক অভিজ্ঞ দর্জি।
* গিলাফ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ মেশিন।

যেভাবে তৈরি হয় কাবার গিলাফ
বেশ কয়েকটি ধাপে কাবার গিলাফ তৈরির জটিল প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। প্রথমে রেশম ও সুতার পিণ্ডি সংগ্রহ করা হয়। এরপর কিং আব্দুল আজিজ কমপ্লেক্স-এর ল্যাবে সেগুলোর গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়। এরপর সুতায় রং লাগানো হয় এবং স্বয়ংক্রিয় মেশিনে কাপড় বোনা হয়। কাপড় পুরো বছর টিকবে কিনা কি না, তা দেখা হয়।

পবিত্র এই গিলাফটি ৬৫৮ বর্গমিটারের। ৬৭০ কিলোগ্রাম কালো রেশম থেকে এটি তৈরি করা হয়। এটি আলাদা আলাদা ৪৭টি রেশমের টুকরায় তৈরি হয়। একবার তৈরি হয়ে গেলে বিশেষ মেশিনে সেলাই করে এসব টুকরো জোড়া দেয়া হয়। এরপর কালো গিলাফের গায়ে মেশিনের ছাপ দিয়ে লেখা হয় আল্লাহর নাম, গুণাবলি ও রাসুলের নাম।

সেলাই কাজ শেষ হলে গিলাফটি গিল্ডিং অ্যান্ড এমব্রয়ডারি বিভাগে পাঠানো হয়। এই বিভাগের সুপারভাইজারসহ ৫০ জনের বেশি দক্ষ কারিগর ও ক্যালিগ্রাফার কাজ করেন। তারা পরম যত্নে গিলাফের চারপাশের সোনালি বেল্ট ও কাবার দরজার পর্দা তৈরি করেন। এই কাজে খাঁটি রুপা এবং সোনার প্রলেপযুক্ত রৌপ্য সুতা ব্যবহৃত হয়।

কাবা শরিফের দরজার গিলাফটি পাঁচটি পর্দায় তৈরি। এতে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াত এবং চারটি সম্পূর্ণ সুরা রয়েছে। এই সুরাগুলো হলো সুরা ফাতিহা, সুরা ফালাক, আন নাস ও কুরাইশ। এ ছাড়া তাতে আল্লাহর বিভিন্ন নাম অঙ্কিত ১৭টি ছোট ছোট বাতি সদৃশ এমব্রয়ডারি রয়েছে। তা ছাড়া গিলাফে আরবি হরফে ‘মক্কা আল-মুকাররমা’, চলতি হিজরি সন এবং সৌদির ক্ষমতাসীন বাদশাহর নাম লেখা থাকে।

গিলাফ তৈরিতে খরচ
পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফ তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ২০ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ছয় হাজার কোটি) টাকা।

কাবায় গিলাফ মোড়ানোর অনুমোদন
গিলাফের এমব্রয়ডারি কাজ শেষ হতে আট থেকে ১০ মাস সময় লাগে। এই কাজ শেষ হলে এসব টুকরো একসঙ্গে সেলাই করা হয় এবং কাবাঘরে লাগানোর আগ পর্যন্ত বিশেষ স্থানে সংরক্ষণ করা হয়। সৌদি বাদশাহ সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের অনুমতি সাপেক্ষে এই নতুন গিলাফ হিজরি বছরের প্রথম দিনে ব্যবহার করা হয়।

https://web.facebook.com/watch/?mibextid=oFDknk&v=1231240214718990&rdid=SAK9uscWBKqoytDR

AHA/FI
আরও পড়ুন