গোসল ফরজ হয় যেসব কারণে

আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৩ এএম

গোসল আরবি শব্দ। অর্থ হচ্ছে পুরো শরীর ধোয়া। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়- পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশে পবিত্র পানি দিয়ে পুরো শরীর ধোয়াকে গোসল বলা হয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি তোমরা অপবিত্র হও, তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬)

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
চার কারণের একটি কারণ পাওয়া গেলে গোসল ফরজ হয়ে যায়। যথা-
১. স্বামী-স্ত্রী যৌন মিলন, স্বপ্নদোষ বা যেকোনো উপায়ে বীর্যপাত হলে গোসল ফরজ হয়।
২. মাসিক বন্ধ হওয়ার পর নারীদের পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।
৩. সন্তান প্রসবের পর নেফাসের রক্ত বন্ধ হলে পবিত্র হওয়ার জন্য নারীদের গোসল করা ফরজ।
৪. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ফরজ।

গোসলের ফরজ কাজ তিনটি
১. কুলি করা।
২. নাকে পানি দেওয়া।
৩. সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধোয়া, যাতে দেহের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনো না থাকে।

ফরজ গোসলের নিয়ম
১. গোসলের আগে প্রস্রাব-পায়খানা সেরে নেওয়া।
২. তারপর বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম বলে শুরু করা। 
৩. প্রথমে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা।
৪. প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তায় নাপাকি না থাকলেও ধৌত করা।
৫. শরীরের কোনো স্থানে নাপাকি লেগে থাকলে তা ধৌত করা।
৬. নামাজের অজুর মতো পূর্ণ অজু করা।
৭. অজুর সময় ভালোভাবে গড়গড়া করা এবং নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো।
৮. অজুর শেষ করে প্রথমে মাথায় পানি ঢালা।
৯. অতঃপর ডান ও বাম কাঁধে পানি ঢালা।
১০. এভাবে তিনবার পূর্ণ শরীর ভালোভাবে ঘষামাজা করে গোসল শেষ করা। পুরুষ-নারী সবার গোসলের নিয়ম একই। তবে নারীর মাথায় বেনী বাঁধা অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছলে তা খোলা জরুরি নয়, অন্যথায় খুলতে হবে। (রদ্দুল মুহতার আলাদ্দুররিল মুখতার, ১/২৮৭,২৯২,২৯৫; ফতোয়ায়ে হিদায়া, ১/৩০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া, ১/১৪; শরহুল বিকায়া, ১/৭৪)

গোসলের শিষ্টাচার হলো
উঁচু স্থানে বসে গোসল করা, যাতে পানি গড়িয়ে যায় ও গায়ে ছিটা না লাগে। পানির অপচয় করা যাবে না। লোকসমাগম যেখানে হয়, সেই স্থানে গোসল না করা। ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা (রদ্দুল মুহতার ১/৯৪)। বাহ্যিক অঙ্গের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনা থাকলে ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না (শরহে মুখতাসারুত তাহাভি ১/৫১০)।

নেল পালিশ, রং বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তা উঠিয়ে নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি, না হলে গোসল শুদ্ধ হবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩)

ফরজ গোসলে পুরুষের দাঁড়ি ও মাথার চুল গোড়ায় সম্পূর্ণ ভালোভাবে ভিজতে হবে। নারীদের চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো। সম্পূর্ণ চুল ধোয়া। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার ১/১৪২); নারীদের কান ও নাকফুল নাড়িয়ে ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহিতুল বুরহানি ১/৮০); তবে  কানের ভেতর ও নাভিতে পানি পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

অনেকের দাঁতে ক্যাপ লাগানো হয়ে থাকে, কুলি করলে নিচে পানি পৌঁছে না এবং তা খুললেও ক্ষতির আশঙ্কা হয়, তাহলে গোসলের সময় তা খোলা জরুরি নয়, আর যদি এমন কিছু লাগানো থাকে, যা সহজে খোলা যায়, তাহলে খুলে তার নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি। (রদ্দুল মুহতার ১/১৫৪, আহসানুল ফাতাওয়া ২/৩২)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে গোসল করতেন
মায়মুনা (রা.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তা দিয়ে তিনি জানাবাতের (অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার) গোসল করেন। আল্লাহর নবি (সা.) পাত্র হাতে নিয়ে নিজের ডান হাতের ওপর কাত করে তা দুই বা তিনবার ধৌত করেন। অতঃপর তিনি তাঁর লজ্জাস্থানের ওপর পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে ধৌত করেন। পরে তিনি মাটির ওপর হাত ঘষে (দুর্গন্ধমুক্ত হওয়ার জন্য) তা পানি দিয়ে ধৌত করেন। অতঃপর তিনি কুলি করেন এবং নাক পরিষ্কার করেন। অতঃপর মুখমণ্ডল ও দুই হাত ধৌত করেন। এরপর তিনি নিজের মাথা ও সর্বাঙ্গে পানি ঢালেন। পরে তিনি সেই স্থান থেকে অল্প দূরে সরে গিয়ে উভয় পা ধৌত করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৫)

SM/FI