প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন যেকোনো মুসলিম ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। হাদিসে এসেছে- মাহনাফ ইবন সুলায়মান (রা.) থেকে বর্ণিত, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে আরাফায় অবস্থান করছিলাম। তখন তিনি বলেন, হে লোক সকল! আমাদের প্রত্যেক গৃহবাসীর ওপর প্রতি বছর কোরবানি করা ওয়াজিব। (আবু দাউদ, হাদিস: ২৭৭৯)
এ ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো ঈদের নামাজের পর পশু কুরবানি করা।
মুতাররাফ বারা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতের পর জবেহ (কুরবানি) করলো তার কোরবানি পূর্ণ হলো এবং সে মুসলিমদের নীতি পালন করলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১৪৭)
বারা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর হাদিসে এসেছে, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে খুতবা দেয়ার সময় বলতে শুনেছি, আমাদের আজকের এই দিনে (ঈদের দিনে) সর্বপ্রথম আমরা যে কাজটি করবো তা হলো সালাত (নামাজ) আদায়। এরপর আমরা ফিরে গিয়ে কোরবানি করবো। যে ব্যক্তি এভাবে করবে সে আমাদের সুন্নাতকে অনুসরণ করবে। আর যে ব্যক্তি পূর্বেই জবেহ (কোরবানি) করে তা তার পরিবার পরিজনের জন্য অগ্রিম মাংস (হিসেবে গণ্য), তা কিছুতেই কোরবানি বলে গণ্য নয়।
তবে কোরবানি দেয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষকেই হুজুরকে দিয়ে পশু জবাই করাতে দেখা যায়। আবার অনেকে মনে করেন কোরবানি পশু জবাই করার জন্য বিশেষ দোয়া পড়তে হয়। তবে নিজেই কোরবানি পশু জবেহ করা উত্তম। এমনকি খোদ রাসুল (সা.)-ও নিজ হাতে কোরবানি পশু জবাই করেছেন।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি সাদা-কালো বর্ণের ভেড়া দ্বারা কোরবানি করেছেন। তখন আমি তাকে দেখতে পাই তিনি ভেড়া দুটোর পার্শ্বদেশে পা রেখে ‘বিসমিল্লাহ্’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে নিজের হাতে সে দুটোকে জবেহ করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১৬০)
এছাড়াও আনাস (রা.) থেকে আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই শিং ওয়ালা সাদা-কালো বর্ণের দুটি দুম্বা কোরবানি করেন। আমি তাকে দুম্বা দুটি নিজ হাতে জবেহ করতে দেখেছি। আরও দেখেছি, তিনি সে দু’টির কাঁধের পাশে তার পা দিয়ে চেপে রাখেন এবং ‘বিসমিল্লাহ’ ও ‘আল্লাহ আকবর’ বলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৯২৮)
উপরিউক্ত হাদিসগুলো দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, কোরবানি পশু নিজে জবাই করা উত্তম। এটি সুন্নাহ্। তবে হুজুরকে দিয়ে পশু জবাই করালেও কোরবানি আদায় হয়ে যাবে।
