আচরণের ভিন্নতা তিক্ততায় রূপ নিলে সম্পর্ক ভাঙনের দিকে এগিয়ে যায়। তবে দাম্পত্য জীবনে মতের অমিল বা আচরণগত পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক নারী ধৈর্যশীল ও সহনশীল হয়ে থাকেন, মানসিক ও আবেগিক দক্ষতার মাধ্যমে তারা জীবনের সমস্যাগুলো সামলে নিতে জানেন, বিশেষত স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে। এমন নারীরা জানেন, সংসারের গোপনীয়তা এক পবিত্র আমানত; তাই তারা দায়িত্বশীলভাবে তা রক্ষা করেন।
অন্যদিকে, কেউ কেউ অস্থির মেজাজের হন, সামান্য কারণেই অভিযোগ তুলেন, তর্কে জড়ান। এর ফলে পারিবারিক অশান্তি বাড়ে, যা শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদে গড়ায়।
অযথা অভিযোগ ও অকৃতজ্ঞতা
স্বামীর আয়ের পরিমাণ নিয়ে অতিরিক্ত অভিযোগ বা তার জীবিকা নিয়ে অসন্তুষ্টি ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী। স্ত্রীর উচিত স্বামীর উপার্জনে সন্তুষ্ট থাকা এবং তার সাধ্য অনুযায়ীখাবার, পোশাক বা অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস যা দেওয়ার চেষ্টা করে তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকা। কারণ অকৃতজ্ঞতা মানুষকে জাহান্নামের পথে নিয়ে যায়।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমি জাহান্নামে গিয়ে দেখলাম, অধিকাংশ নারীই সেখানে থাকবে।’ সাহাবিরা জানতে চাইলেন, এর কারণ কী? তিনি বললেন, ‘তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ।’
তাই এমন কাজ ও আচরণ থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যদি স্বামী কোনো বিষয়ে দুর্বল হন বা তার কাছে আপনার কিছু চাওয়ার থাকে, তবে প্রথমে তার ভালো দিকগুলো স্মরণ করিয়ে দিন, প্রশংসা করুন, তারপর আপনার চাহিদার কথা বলুন। অকৃতজ্ঞতা ভালোবাসা ও মায়ার বন্ধন ভেঙে দেয়।
গোপনীয়তা ফাঁস সম্পর্কের মৃত্যু ডেকে আনে
দাম্পত্য জীবনের গোপন কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করা বড় অপরাধ। এতে স্বামীর বিশ্বাস নষ্ট হয়। বন্ধুর সঙ্গে বা আত্মীয়দের সঙ্গে স্বামীর বিষয়ে গসিপ করা কখনোই শোভন নয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সৎ স্ত্রীগণ স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাদের মর্যাদা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৪) অর্থাৎ ধার্মিক স্ত্রী সে, যে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে এবং স্বামীর হক আদায়ে বিশ্বস্ত থাকে।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সেরা নারী সে, যাকে দেখে স্বামী আনন্দ পায়; আদেশ দিলে মান্য করে; আর তার অনুপস্থিতিতে নিজের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ রক্ষা করে।’
স্বামীর প্রতি সম্মান ও ইতিবাচক মনোভাব
স্ত্রীর উচিত স্বামীর প্রশান্তি ও ভালোবাসার অনুভূতি জাগিয়ে রাখা। তার কর্ম, শিক্ষা বা আয়ে তুচ্ছতা না করা। এসব আচরণ দাম্পত্য ভালোবাসাকে নিঃশেষ করে দেয়।
স্বামীকে কখনো আবেগহীন বা উদাসীন বলে অভিযুক্ত করবেন না। এতে তিনি আরও দূরে সরে যাবেন। বরং সামান্য বিষয়েও প্রশংসা করুন, তাকে মূল্যায়ন করুন।
স্বামীর তুলনা টেলিভিশন বা সিনেমার নায়কদের সঙ্গে করাও বড় ভুল। বরং তাকে বুঝিয়ে দিন, আপনি কৃতজ্ঞ যে আপনার পাশে একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ আছেন, যিনি আপনাকে ভালোবাসেন, রক্ষা করেন, সন্তানদের নিয়ে জান্নাতের পথে হাঁটতে চান।
অযথা তর্ক ও উচ্চস্বরে কথা বলা
যে নারীরা স্বামীর কথা শুনতে গিয়ে তর্কে লিপ্ত হন, তাদের সংসারে শান্তি থাকে না। অতিরিক্ত বিতর্ক দুজনের মনের শান্তি নষ্ট করে দেয়।
যদি কোনো বিষয়ে মতবিরোধ হয়, শান্তভাবে কথা বলুন। সবার সামনে বা সন্তানের সামনে উচ্চস্বরে কথা বলা বা স্বামীকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন। একান্তে নরম স্বরে বোঝালে স্বামী সহজেই বুঝবেন। কারণ পুরুষের স্বভাবেই অহংকার ও আবেগ থাকে; তাই তাদের সঙ্গে কোমলভাবে আচরণ করাই উত্তম।
বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলানো
যেমন, স্বামী যদি দেরিতে বাড়ি ফেরেন, চিৎকার না করে বোঝান যে আপনি একা থাকতে ভয় পেয়েছিলেন বা তাকে মিস করেছেন। এতে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।
স্বামীর কোনো ছোটখাটো মিথ্যা ধরার চেষ্টা করবেন না, বিশেষত যদি তা সম্পর্ক ঠিক রাখার উদ্দেশ্যে বলা হয়।
দাম্পত্য অধিকারে অবহেলা না করা
স্বামী যখন স্ত্রীকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আহ্বান জানান, তখন অযথা অজুহাত দেখানো গুরুতর অপরাধ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে স্ত্রী স্বামীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তাকে রাগান্বিত অবস্থায় ঘুমাতে দেয়, ফেরেশতারা তাকে সকাল পর্যন্ত অভিশাপ দেয়।’ (বুখারি)
ঈর্ষা ও সন্দেহ থেকে বিরত থাকা
অতিরিক্ত হিংসা ও সন্দেহ দাম্পত্য সম্পর্ক ভাঙার মূল কারণ। স্বামীর ফোন, পকেট বা মেসেজ চেক করা, মায়ের প্রতি বা শ্বশুরবাড়ির কারো প্রতি অকারণ ঈর্ষা করা, এসব আচরণ পরিবারে বিষ ঢালে।
বিচ্ছেদ চাইবেন না কখনো
কোনো কারণ ছাড়াই স্বামীর কাছে তালাক চাওয়া ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী বিনা কারণে স্বামীর কাছ থেকে তালাক চায়, তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম।’
তাই ‘তালাক’ শব্দটি আপনার মুখ থেকে মুছে ফেলুন। এতে শান্তি আসে না, বিশেষত যখন সন্তান থাকে। আবেগের বশে বলা এই শব্দ সন্তানদের জীবনে স্থায়ী ভয় ও অস্থিরতা বয়ে আনে। সূত্র : ইসলাম ওয়েব ডট নেট
নতুন নতুন সম্পর্ক থেকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ থাকে