ডিসেম্বরের হিমেল রাতে প্রকৃতি যখন শীতের চাদরে নিজেকে মুড়ে নেয়, ঠিক তখনই আকাশে দেখা মিলবে এক অসাধারণ মহাজাগতিক দৃশ্যের। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে আকাশে উঠতে যাচ্ছে বছরের তৃতীয় এবং শেষ সুপারমুন। যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় ‘কোল্ড সুপারমুন’ নামে পরিচিত। এই পূর্ণিমা শুধু ডিসেম্বরের আগমনী বার্তা বয়ে আনে না, বরং এক বিশেষ উজ্জ্বলতা নিয়ে মহাকাশে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়।
পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য-অগণিত সৃষ্টি ও নেয়ামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এর কোনওটি মানুষের গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনের অংশ আবার কোনওটি মানুষের হৃদয়কে প্রশান্তি দেয়, দেখে মানুষের মন জুড়ায়। এমন একটি সৃষ্টি হলো চাঁদ। চাঁদ শুধু মানুষের হৃদয়-মনকে আন্দোলিত করে না। চাঁদের আলো পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনের অংশও বটে।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই সত্তা, যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চাঁদকে আলোকময় বানিয়েছেন এবং তার জন্য মঞ্জিলসমূহ নির্ধারিত করেছেন, যাতে তোমরা বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি এই প্রমাণসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন ওইসব লোকের জন্য যারা জ্ঞানবান।’ (সুরা ইউনুস : ৫)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমণ্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়মাধীন করলেন; প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে। তিনি সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পারো।’ (সুরা রাদ : ২)।
আরও বলেন, ‘তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চাঁদকে, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে।’ (সুরা ইব্রাহিম : ৩৩)

এমন কেউ নেই, চাঁদের জ্যোত্স্না যাকে মুগ্ধ করে না। চাঁদ শুধু প্রকৃতির আলোরই উৎস নয়, এই চাঁদ, চাঁদের সৌন্দর্য ঈমানদারের অন্তরে প্রভুপ্রেমের বারতা নিয়ে আসে। এই চাঁদ মুমিনের হৃদয়ে তার প্রভুর স্মরণ জাগিয়ে তোলে।
হজরত জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বসেছিলাম। এক সময় তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, অচিরেই (জান্নাতে) তো তোমরা তোমাদের প্রভু আল্লাহ তাআলাকে এমন স্পষ্টভাবে দেখতে পারবে যেমন এ চাঁদকে অবাধে দেখতে পাচ্ছ।
(সুতরাং যদি এরূপ চাও) তাহলে সাধ্যমত সূর্যোদয়ের পূর্বের সালাত এবং সূর্যাস্তের পূর্বের সালাত উত্তম সময়ে আদায়ের মাধ্যমে আয়ত্তে রাখ। -(বুখারি শরিফ, হাদিস : ৫৫৪)
আরেক হাদিসে এসেছে, সর্বপ্রথম একটি দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল। যে দলের ঈমান হবে সর্বোচ্চ শিখরে, তাক্বওয়া ও পরহেযগারী হবে সবার শীর্ষে এবং আমল হবে সবচেয়ে উত্তম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতের প্রথম প্রবেশকারী দলটির আকৃতি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত হবে। অতঃপর তাদের পরবর্তী দলটি আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় জ্যোতির্ময় হবে। তারা (জান্নাতে) পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না, থুথ ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না।
তাদের চিরুণী হবে স্বর্ণের। তাদের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধ কাঠ। তাদের স্ত্রী হবে আয়তলোচনা হুরগণ। তারা সকলেই একটি মানব কাঠামো, আদি পিতা আদমের আকৃতিতে হবে (যাদের উচ্চতা হবে) ষাট হাত পর্যন্ত।” (বুখারী-মুসলিম)
আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাব? জবাবে তিনি বললেন, আকাশে মেঘ না থাকাবস্থায় দুপুরের সময় সূর্য দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সাহাবাগণ বললেন, জী না। অতঃপর তিনি বললেন, আকাশে মেঘ না থাকাবস্থায় পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হয় কি? সাহাবাগণ বললেন, জী না। তারপর তিনি বললেন, ঐ সত্তার কসম! যার হাতে আমার জীবন! চন্দ্ৰ-সূৰ্য কোন একটি দেখতে তোমাদের যেরূপ কষ্ট হয় না, তোমাদের রবকেও দেখতে তোমাদের ঠিক তদ্রুপ কষ্ট হবে না।
