ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ট্রাম্পের সফলতায় দুশ্চিন্তায় ইউরোপ

আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪, ০৯:২০ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে একের পর এক সুখবর পাচ্ছেন তিনি। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছেন ট্রাম্প। মার্কিন সরকার, বিরোধী শিবির ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বড় আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছেন তিনি। আমেরিকার পাশাপাশি ট্রাম্প জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলোতেও।

নিজ দলের মধ্যে প্রার্থিতার দৌড়ে শুরুতেই আইওয়া ককাসে ভেলকি দেখান ট্রাম্প। তার প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নিকি হেলি, রন ডিসান্টিস পাত্তাই পাননি। এরপর নিউ হ্যাম্পশায়ারেও দলীয় ভোটে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প। দলীয় ভোটের এসব ফলাফলই জানান দিচ্ছে, ট্রাম্পের প্রার্থিতা ঠেকায় কে? এ ছাড়া বিভিন্ন জনমত জরিপে বলা হয়েছে, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের জো বাইডেন থেকে অনেক এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।

প্রার্থিতার ভোটে ট্রাম্পের বিজয়ে অবশ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তার দল এবং বিরোধী শিবিরেও। তার দলের নিকি হেলির দাবি, ট্রাম্প মনোনয়ন পেলে বাইডেন এমনিতেই জিতে যাবেন। আর ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফিরলে সব নছনছ করে দেবেন।

সিএনএন জানাচ্ছে, সাবেক প্রেসিডেন্টের এ প্রত্যাবর্তন অন্য কারণে আরও চমকপ্রদ। ৯১টি ফৌজদারি অভিযোগ এবং অন্যান্য আইনি জটিলতা রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের কাছে হেরে ইউএস ক্যাপিটল ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এসব গুরুতর অভিযোগও ট্রাম্পকে দমাতে পারছে না। ডেমোক্র্যাটরা মনে করছেন, নভেম্বরের ভোটে ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে এলে পরিস্থিতি খুব ভয়ংকর হবে।

ট্রাম্পের আবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা এরই মধ্যে জ্বর উঠে গেছে ইউরোপের অনেক দেশের সরকারপ্রধানের। কেননা ট্রাম্প খুবই আনপ্রেডিক্টেবল, কখন কী বলেন আগে থেকে বোঝা কঠিন। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের শেষের দিকে হোয়াইট হাউসে ফিরে গেলে ইউরোপকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এক বক্তব্যে এ সতর্কবার্তা দেন তিনি।

পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের আবার ফিরে আসার সম্ভাবনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর কর্মকর্তাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তাদের উদ্বেগের কারণ ট্রাম্প বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারেন এবং ইউরোপের নিরাপত্তা বিষয়ে মার্কিন সমর্থন প্রত্যাহার করতে পারেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের জ্যেষ্ঠ জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট সদস্য ক্যাটরিনা বার্লির ভাষ্যটা এমন- ট্রাম্প এমন এক ব্যক্তি, যিনি গণতন্ত্রের প্রতি তার অবজ্ঞা গোপন রাখেন না। তিনি আবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। ইউরোপকে নিজের ওপর ফোকাস করতে হবে। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায় থাকাকালে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলও একই কথা বলেছিলেন। তার মতে, ট্রাম্প ইউরোপকে কোনো সহযোগিতা করবেন না। ইউরোপকে তার নিজের ভরসায় চলতে হবে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে ঘুরে যেতে পারে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মোড়। যুদ্ধটির প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেছিলেন- তিনি প্রেসিডেন্ট হলে জেলেনস্কি ও রাশিয়ার  প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি মীমাংসায় নিয়ে আসতে সম্মত হবেন। অবিলম্বে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন। ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছিলেন, উভয় নেতার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড সিএনএনের এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ন্যাটোর জন্য একটি বিপদের কারণ হতে পারে। আবার ট্রাম্পের বিজয় ইউক্রেনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার আরেকটি কারণ হয়ে উঠতে পারে। অবশ্য যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ট্রাম্পকে এ মুহূর্তে বিশ্বের প্রয়োজন হতে পারে। 

তবে ট্রাম্পের নির্বাচনে দাঁড়ানো নিয়ে কিছু আইনি জটিলতা এখনও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের বিদ্রোহবিষয়ক একটি ধারার প্রয়োগ করে জানিয়েছে, ট্রাম্প ওই রাজ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য যোগ্য হবেন না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রয়োগ করা হয়েছে। যদিও এ নির্দেশের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ট্রাম্প।

 

HK/SA/MR
আরও পড়ুন