ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

দাবদাহে ফ্যানের বাজারেও উত্তাপ, পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা

আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম

প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে দেশ। তীব্র গরমে এবং লোডশেডিংয়ে জনজীবন হয়ে পড়েছে স্থবির। খেটে খাওয়া মানুষের জীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। তীব্র গরমে এসির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক পাখার (ফ্যান) কদরও বেড়েছে সব আয়ের মানুষের কাছে। তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে স্বস্তি পেতে ফ্যান কিনতে বাজারে গেলেও লাগামহীন দামের উত্তাপে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। সুযোগ-সন্ধানী ব্যবসায়ীদের লাগামহীন সিন্ডিকেটে মধ্যবিত্তের স্বস্তির একমাত্র সম্বল ফ্যানের বাজারে গিয়েই হোঁচট খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। হঠাৎ করেই বৈদ্যুতিক ফ্যানের দাম বৃদ্ধির জন্য সাধারণ ক্রেতারা দুষছেন সিন্ডিকেটকে। অন্যদিকে বিক্রেতারা দাবি করছেন, বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়ায় ও যোগান কম থাকায় দাম বেড়েছে। ক্রেতাদের দাবি, এখনই সিন্ডিকেটের লাগাম না টানা গেলে নানা অজুহাতে ভোক্তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিবে কোটি কোটি টাকা।

রবিবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকা, নবাবপুর রোডের রহমান মার্কেট, শামস মার্কেট, পাটুয়াটুলী ,সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটসহ রাজধানীর কয়েকটি পাইকারী ও খুচরা বাজারে বেশি দামে ফ্যান বিক্রির বিষয়টি ধরা পড়ে । বিদ্যুতের সংকট ও লোডশেডিংয়ে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেগুলোরও দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। 

বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গরম থেকে রক্ষা পেতে ফ্যান কেনার হিড়িক পড়েছে। সবচেয়ে বেশী কেনাবেচা হচ্ছে চার্জার ফ্যানগুলো। চাহিদা বেশি থাকায় চার্জার ফ্যানের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে অনেকেই নিজের পছন্দসই ফ্যান না কিনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। অনেকেই আবার পুরনো সিলিং ফ্যান বদলে নতুন সিলিং ফ্যান কিনতে বাজারে এসেছেন ‌।

রাজধানীর সূত্রাপুরের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শফিকুল আলম নবাবপুর রোডে রহমান মার্কেটে এসেছেন চার্জার ফ্যান কিনতে‌। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঈদের আগের দাম থেকে এখন ১০০০ টাকা বেশি দিয়ে ফ্যান কিনতে হচ্ছে ‌। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে আমাদের মতো সাধারণ জনগণের পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা। 

ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম তার দোকানের জন্য ছোট স্টোর্মি ফ্যান কিনতে গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে আসেন। তিনি বলেন, তাপমাত্রা বাড়ায় দোকানে সিলিং ফ্যানে গরম হাওয়া কমাতে পারছে না। তাই ছোট স্টোর্মি ফ্যান কিনতে এসেছি। স্টোর্মি ফ্যানগুলা আগে ৭০০ দিয়ে কিনেছি । আজকে ৯০০-১১০০ টাকা দাম চাচ্ছে।

কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী আলিফ বলেন, ২০০০ টাকা নিয়ে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু ফ্যানের দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। একারণে ছোট স্টোর্মি ফ্যান কিনেই বাসায় যাচ্ছি।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি ইলেকট্রিনিক মার্কেটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ব্র্যান্ডভেদে চার্জার ফ্যান বছরের অন্যান্য সময়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। ছোট স্ট্যান্ড (৯-১০ ইঞ্চি) বা টাইফুন ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। রিচার্জেবল ফ্যানের মধ্যে ডিফেন্ডার ব্র্যান্ডের ১৬ ইঞ্চির ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৬৪০০ টাকায়, যা ঈদের আগে ছিলো ৫৫০০ টাকা। অন্যদিকে একই মডেলের কেনেডি ব্র্যান্ডের ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৫০০০ টাকায়। একই মডেলের হিমেল ব্র্যান্ডের ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪২০০ টাকায়। ডিফেন্ডারের ১২ ইঞ্চির  ফ্যান ঈদের আগে ২৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৩৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। স্ট্যান্ড ফ্যানগুলোর মধ্যে জিএফসি ব্র্যান্ডের ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৮২০০-৮৫০০ টাকায়, যা কিছুদিন আগেও ৭৫০০ টাকায় পাওয়া যেতো। অন্যদিকে কেনেডি ব্র্যান্ডের স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭০০০ টাকায় ।

এদিকে দেশীয় ব্রান্ডের সিলিং ও  চার্জার ফ্যানগুলোও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। সুপার স্টার ফ্যানের দাম হাঁকাচ্ছে ৩২০০ টাকা, যা আগে ২৮০০/২৯০০ ছিলো। যমুনা ব্র্যান্ডের ফ্যানের দাম ৩০০০ টাকায, যা আগে ২৮০০ ছিলো। অন্যদিকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দেশীয় ব্র্যান্ড মিনিস্টার এর গ্যালাক্সি মডেলের ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৩৪৯০ টাকায় এবং  লাক্সারিয়াস মডেলের ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪৬৯০ টাকায়, যার সাথে ইলেকট্রিক কেটলি ফ্রী দেওয়া হচ্ছে ‌। ওয়ালটন ব্র্যান্ডের ফ্যান তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের সেলিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ সেলিম বলেন সংযোগ ডটকমকে খবর, পাইকারিতে বেশী দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে। একারণে মার্কেটে মালের দাম একটু বাড়তি। 

চাহিদা বেশি থাকায় দাম আরো বাড়বে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী।

নবাবপুর রোডের শামস মার্কেটে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমদানীকারক খবর সংযোগ ডটকমকে বলেন, ডলার সংকটে ঋণপত্র খুলতে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়ে গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এসব আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। 

মার্কেটে পণ্য কম থাকার কথা বলে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

AST
আরও পড়ুন