ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সিন্ডিকেটে অস্থির আলু-পেঁয়াজের বাজার

আপডেট : ০৫ মে ২০২৪, ১১:২৩ এএম

মৌসুমের এই সময়ে যেখানে আলুর দাম সাধারণ ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকার কথা, সেখানে দাম উল্টো বাড়ছে। অতিরিক্ত এই দামের কারণ হিসেবে বরাবরের মতোই বাজার সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন খরচ ও বৈরী আবহাওয়াকেও দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

এদিকে, বর্তমান বাজারে ভারতের পেঁয়াজ সরবরাহ কিছুটা কম। তবে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে দেশি পেঁয়াজের। বাজারগুলোতে বিক্রিও হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের মধ্যে সরবরাহ এবং মজুদ পর্যাপ্ত থাকলেও অজানা কারণে পণ্যটির দামও হঠাৎ বাড়তির দিকে।

ভোক্তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা শুনলেই যেন দেশি পেঁয়াজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আবার আমদানি বন্ধ হওয়ার খবর পেলেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। 

এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি ফের চালু না হওয়া পর্যন্ত  পেঁয়াজের দাম কমবে না।

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। উৎপাদন মৌসুম শেষ হওয়ার পরপরই এসব কৃষিপণ্যের চড়া দাম দেখা যাচ্ছে বাজারে। এই দুই পণ্যই এপ্রিলের মাঝামাঝিতে কালবৈশাখী শুরু হওয়ার আগেই ঘরে তোলেন কৃষকেরা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎপাদন মৌসুমেই এবার আলু ও পেঁয়াজের দাম বেশি ছিল। কারণ, গত বছরের শেষ দিকে এসে এই দুই কৃষিপণ্যের দাম অনেকটা লাগামহীন হয়ে পড়ে। সেই ধারাবাহিকতা দেখা যায় উৎপাদন মৌসুমেও। আশা করা হচ্ছিল, মৌসুম শেষ হলে আলু ও পেঁয়াজের দাম প্রতিবছরের মতো এবারও নেমে আসবে। কিন্তু এবার বাজারে সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে না। উল্টো বাড়তি দাম এই দুই কৃষিপণ্যের।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত শনিবারের বাজারদরের তালিকানুযায়ী, ঢাকার বাজারে খুচরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়। কিন্তু বাজারে আলুর দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। টিসিবির হিসাবে গত বছরের এই সময়ে বাজারে আলুর দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। সেই হিসাবে বাজারে প্রতি কেজি আলু প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবে দাম বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, আলুর ভালো উৎপাদন হয়েছে। হিমাগারে আলু সংরক্ষণও গত বছরের চেয়ে বেড়েছে। এবার কৃষক ভালো দাম পেয়েছেন, সেটা ইতিবাচক। কিন্তু কৃষক থেকে ব্যবসায়ী যেকোনো পর্যায়ে কেউ অতিরিক্ত লাভ করে ক্রেতার ওপর চাপালে তখন বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।

মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, সভাপতি, বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন
 
দেশীয় পেয়াঁজের বাজার অনেকটা আমদানি নির্ভর। ফলে আমদানি কমবেশি হলে বাজারে এর প্রভাব পড়ে। তবে আলু দেশীয় উৎপাদন নির্ভর। কিন্তু গতবছর থেকে আলুর বাজার অস্থির হওয়ায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে আলু আমদানির অনুমতি দিয়ে রেখেছে। কিন্তু পাশের দেশে আলুর দাম বেশি থাকায় আমদানিকারকদের আগ্রহ কম। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর একধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে সময়ে-সময়ে সরকারি ভিত্তিতে কিছু পেঁয়াজ আসছে। তবে সেটা পরিমাণে কম। নতুন করে গতকাল বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশে এক লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানির কথা জানিয়েছে ভারত সরকার।

এদিকে টিসিবির হিসাব বলছে, দেশের বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। যদিও বাজারে পেঁয়াজের দাম ক্ষেত্রবিশেষ আরও ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি দেখা যাচ্ছে। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের এই সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৪ শতাংশ বেড়েছে। দেশে উৎপাদিত রসুনের দামও গত বছরের চেয়ে এখন ৪২ শতাংশ বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকায়। গত বছর যা ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে। বাজার কারসাজির মাধ্যমেই ব্যবসায়ীরা দাম নিয়ন্ত্রণ করে। আমদানির খবরে যে পণ্যেও দাম কমে বাড়ে, সেখানে কারসাজি ছাড়া আর কী থাকতে পারে! সরকারকে ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে। তা না হলে স্থিতিশীল করা যাবে না।

নাজের হোসাইন, সহসভাপতি, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ

এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, বাজারে এখন পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। বিপরীতে চাহিদা কম থাকায় পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী। বাজারে এখন যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, এর চেয়ে কমে বিক্রির সুযোগ নেই। সরবরাহ ঠিক থাকলে সামনেও পেঁয়াজের দাম এমনই থাকবে।

AST
আরও পড়ুন