দেশের বাজার পরিস্থিতি নাগালের বাহিরে চলে যাওয়ায় দিন দিন বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে এসব মানুষের নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে মাছ-মাংসসহ আমিষ জাতীয় খাবারগুলো। তবে শরীরের আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে তাদের শেষ ভরসা ছিল ডিম। এ জন্য ডিমকে কেউ বলেন গরিবের আমিষ, আবার কেউ বলেন আমিষঘর। কেননা, এই ডিমের ভিতরের সম্পূর্ণটাই আমিষ। তবে খাদ্য পণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গরিবের আমিষ খ্যাত ডিমও চলে যাচ্ছে তাদের নাগালের বাহিরে। ফলে ডিম খাওয়া এখন বিলাসিতায় পরিণত হয়ে গেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের চিত্র অনুযায়ী প্রতি ডিমের হালিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে দাম বেড়েছে। ডজনে বেড়েছে ২৫-৩০ টাকা। লাল ডিম আগে ছিল ৪৫ টাকা। এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে হালি। সুতরাং আগে ডজন ছিল ১২০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা।
সাদা ডিম আগে ছিল হালি ৪০ টাকা এখন ৪৫ টাকা। যা আগে ডজন ছিল ১১০ টাকা আর এখন ১৪০ টাকা। তাছাড়া হাঁসের ডিম এখন ৯০ টাকা হালি, আগে ৬৫ টাকায় বিক্রি হতো।
সস্তায় প্রোটিনের ঘাটতি পূরণে ডিমের জুড়ি নেই জানিয়ে ক্রেতারা জানান, ডিম এখন বড় লোকদের খাবার। এটি এখন শুধু তাদের দখলে। যেভাবে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে তাতে করে নিম্ন আয় দিয়ে আর কত দিন যে চলতে পারবো তা বলা মুশকিল।
এদিকে দাম কমেনি মাছ কিংবা মাংসে। মুরগির বাজারেও বাড়ছে দাম। মুরগির বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি মুরগির দাম নেওয়া হচ্ছে ৬৮০ টাকা করে। আগে ছিল ৭০০ টাকা। সেক্ষেত্রে ২০ টাকা কমেছে। সোনালি মুরগি আগে ছিল ৪০০ টাকা আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা করে। তবে, পাকিস্তানি মুরগির দাম বেড়েছে অনেক। আগে ৩০০ টাকা হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ৩৮০ টাকা করে। লেয়ার ব্রয়লারেরও দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা করে।
অন্যদিকে, এত উঠানামার মধ্যে একই অবস্থানে রয়েছে মাছের বাজার। ইলিশ মাছ প্রকারভেদে ৮শ থেকে ২২শ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। যা গত ১৫ দিনের মধ্যে একই রকম আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও গরু ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১১শ টাকা ও ছাগলের মাংস ১ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি। যা আগের দামের প্রায় সমান।
মোহাম্মদ হালিম নামে এক ক্রেতা দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ‘আমি ছোট খাটো একটা চাকরি করি। মেসের বাজার করতে এসেছি এখানে। সবকিছুর যে দাম, তাতে হাত দেওয়ার সাহস পাচ্ছি না।,
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ব্যাচেলর আর নিম্ন আয়ের মানুষ তো মাছ মাংস কিনে খেতে পারবো না। তাই শরীরের আমিষ পূরণ করতে ডিমই আমাদের ভরসা। কিন্তু দিন দিন যেভাবে দান বাড়ছে, তাতে কিছু দিন পর ডিমও আমাদের সাধ্যের ভিতরে থাকবে না।’
সাইফুল ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ‘আমি মাছ খাচ্ছি না ১৫ বা ১৬ দিন থেকে। কিন্তু সন্তানদের তো ভালো মন্দ কিছু খাওয়াতে হবে। তাই আসছি আজ মাছ নিব। কিন্তু মাছের দাম দেখে সাহস হারিয়ে ফেলছি। এখন ডিমেও যে অবস্থা দেখছি তাতে মনে হয় না এটি আর আমরা খেতে পারবো।’
ডিম ব্যবসায়ি সোহেল দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ‘এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আড়ৎদাররা আমাদের যে দাম ধরে দেয় আমরা সেই দাম থেকে ১ বা ২ টাকা লাভে ডিম বিক্রি করি।’
আগের তুলনায় ডিমের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দাম তো কমছে না বরং দিন দিন বাড়ে। আমাদের দেশে একবার যা কিছু বাড়ে তা কি কোনো দিন কমে।’
