আবু সাঈদ বন্ধু ও সহপাঠীদের কাছে কেমন ছিলেন?

আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম

রংপুরের কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া মহাপুরুষ ছিলেন নুরলদীন। তার কথা সবার মনে আছে,তিনি বাংলার মানুষকে বলেছিলেন জাগো বাহে কুনঠে সবাই।তেমনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের( বেরোবি ) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। দেশের মানুষের উপর চলা অন্যায় অত্যাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

পুলিশ বাহিনীর গুলিতে তার বুকের তাজা রক্ত বিসর্জন দিয়ে ছাত্র সমাজের কাছে মহানায়ক হয়ে আছেন। তার এই আত্মত্যাগ দেখে দেশের মানুষ আরো বেশি সোচ্চার হয়েছে। তাকে দেখে ছাত্রসমাজ আরও বেশি মনোবল পেয়েছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। বাংলার মানুষ ও ছাত্রসমাজ বলে আমার ভাই আবু সাঈদের রক্ত বৃথা যেতে দেবনা। ছাত্রসমাজ রক্তের বিনিময়ে তাদের দেওয়া কথা রেখেছেন। আবু সাঈদ সহ আরো হাজারো ছাত্রের হাত ধরে দেশের বৈষম্য দুর হয়েছে।

আবু সাঈদের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, শহীদ আবু সাঈদ তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা! উৎসাহের বাতিঘর! টিউশন থেকে ফিরতি পথে মাঝে মধ্যেই শহীদ আবু সাঈদ এঁর সাথে বাসে দেখা হতো! তারপর গল্প! আমাদের জীবনগল্প! জীবনগল্পের এক জীবন্ত মহানায়ক শহীদ আবু সাঈদ! আমরা যারা গ্রাম থেকে উঠে এসেছি, তাদের গল্পগুলো আলাদা! শহুরের ইট পাথরের চার দেয়ালে যারা বসবাস করে তাদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা!

শহীদ আবু সাঈদ টিউশনি করাতেন! নিজে চলতেন। আবার সেখান থেকে তাঁর  বৃদ্ধ মা-বাবাকেও টাকা পাঠাতেন। তাঁর বৃদ্ধ মা- বাবার চোখে এখন শুধুই অসহায়ত্বের ছবি ফুটে ওঠে! তাঁদের ছলছল চোখ আমাদের দেখিয়ে দেয় দেশ ও সমাজের নানান অসঙ্গতি। যে অসঙ্গতি ও বৈষম্য দূর করার জন্য পুলিশের বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন শহীদ আবু সাঈদ।

শহীদ আবু সাঈদ কোনো রাজনৈতিক দলকে অন্ধভাবে কখনোই  সমর্থন করতেন না। একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত ছিলেন বহুদিন। কাজ করে গেছেন গরীব ও অসহায় মানুষদের পাশে থেকে। শহীদ আবু সাঈদ রক্ত দিয়ে  তৈরি করলেন  এক নতুন ইতিহাস! আর আমি আমরা হয়ে থাকলাম  সেই ইতিহাসের অংশ!

মার্কেটিং বিভাগের আবু সাঈদের বন্ধু মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আবু সাঈদীর সাথে চলাফেরা আমার ছোটবেলা থেকে আমরা ছোটবেলার বন্ধু। আমার বন্ধু আবু সাঈদ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ছিলেন এবং সেই আন্দোলনে ১৬ ই জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।

সে বীরের মতো বুক পেতে দিয়েছে পুলিশের বাহিনীর বন্দুকের নলের সামনে। তার বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তাকে আমি সব সময় দেখেছি মেয়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিপক্ষে কথা বলতে।সে কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি।সে অত্যন্ত মেধাবী ও দায়িত্বশীল মানুষ ছিলেন। তার পিতা মাতার প্রতি সে অনেক দায়িত্বশীল ছিল।সে সময় পেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো এবং কোন বন্ধু বিপদে পড়লে সবার আগে সে এগিয়ে যেত। যদি কেউ তার থেকে রক্তের জন্য সাহায্য চাইতো তাহলে সে যেই ভাবেই হোক ম্যানেজ করে দিতো।

আবু সাঈদ এর গ্রামের ছোট ভাই ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ ফাত্তাহান আলী বলেন,আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার আগে থেকেই আবু সাঈদ ভাইয়ের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। ভাই অনেক ভালো ও মেধাবী  শিক্ষার্থী।ভাইয়ের কথা গ্রামে সর্বদাই আলোচনা হতো।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলো তিনি প্রথম থেকে সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এবং সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি আন্দোলনে সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দেন। যেই দিন আবু সাঈদ ভাই শহীদ হন সেদিন আমরা দুজনে একসাথেই আন্দোলনের জন্য বের হয়েছিলাম।আমরা যখন মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে যাই তখন পুলিশ আমাদের বাধা দেয় এবং লাঠিচার্জ করে।

সেই রিচার্জে আবু সাঈদ ভাইয়ের মাথা ফেটে যায় এবং মাথা থেকে  রক্ত বের হয় । সেই রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি পুলিশের সামনে একাই বুক পেতে দেন। পুলিশ তার দিকে তাক করে গুলি ছুড়তে থাকেন, এক পর্যায়ে তার বুকে গুলি এসে লাগে এবং আবু সাঈদ ভাই রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন।আমরা সবাই মিলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়।ডাক্তার আবু সাঈদ ভাইকে দেখে বলে সে আর বেঁচে নেই।আবু সাঈদ ভাই খুব ভালো মনের মানুষ এবং সে আমার যেকোনো সমস্যায় সাহায্য করতো।আবু সাঈদ ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। 

HK
আরও পড়ুন