শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এলবিডব্লু আবেদনে আম্পায়ার আঙ্গুল তোলার সঙ্গে সঙ্গে পুরো আফগানিস্তান দল উল্লাসে মেতে উঠল। জিতে গেছে তারা ম্যাচ, ৮ রানে। সেন্ট ভিনসেন্টে বৃষ্টিভেজা ম্যাচে দারুণ নাটকীয় ভঙ্গিতে এই ম্যাচ জিতল আফগানিস্তান। সেই সঙ্গে পৌঁছে গেল তারা বিশ্বকাপের সেমিতে। আফগানিস্তানের এই জয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ।
টসে জিতে আফগানিস্তান ব্যাট করতে নেমে এই ম্যাচে বেশি দূর যেতে পারেনি। আর্নস ভ্যালের মন্থর উইকেটে ১১৬ রানে থেমে যায় তাদের ইনিংস। সেই রান তাড়ায় নামার আগেই সমীকরণ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। শুধু জিতলেই চলবে না। জিততে হবে ১২.১ ওভারে। অর্থাৎ ৭৩ বলে বাংলাদেশকে জয়ের টার্গেট ১১৬ রান ছুঁতে হবে। পরে অবশ্য বৃষ্টির কারণে সেই টার্গেট থেকে দুই রান কমেছিল। কিন্তু সেমিফাইনালের সমীকরণ যে পুরো করতে পারল না বাংলাদেশ। ম্যাচ হেরে গেল শেষের দিকে এসে। যোগ্য দল হিসেবেই দাপুটে কায়দায় আফগানিস্তান এখন এই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলছে। প্রথমে অস্ট্রেলিয়াকে তারপর বাংলাদেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপের শেষ চারের শেষ দল তারা। এই প্রথমবারের মতো কোনো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলছে আফগানিস্তান। এই গ্রুপ থেকে সেমিতে পৌঁছে গেছে অস্ট্রেলিয়া।
বৃষ্টির কারণে শেষের দিকে বাংলাদেশের জয়ের টার্গেট পুনর্নির্ধারিত হয়। ১৯ ওভারে করতে হবে ১১৪ রান। কিন্তু এই ম্যাচে কোনো কিছুই করতে পারল না বাংলাদেশ। সুনির্দিষ্ট ওভারে জেতার সমীকরণের সমাধান করতে পারল না। পুরো ওভারে ম্যাচও জিততে পারল না। পুরো ম্যাচ জেতার জন্য আফগানিস্তান যেভাবে ঝাঁপালো, বৃষ্টি আইনের সুবিধা নিতে মাঝে কিছুটা ইনজুরির নাটকও করল। তারপর এই ম্যাচ জেতার জন্য যে জেদ, জোস ও তাগিদ আফগানিস্তান দেখাল, সেই হিসেবে বাংলাদেশ নস্যি।
সেমিতে খেলার জন্য যে টার্গেট ওভারে এই ম্যাচ জেতার অঙ্ক ছিল বাংলাদেশের সামনে, সেই অঙ্ক কেন দল শেষের দিকে কষলো না- তা বিস্ময় ছড়াচ্ছে। আফগানিস্তানের জয়ে পুরো ম্যাচে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন বাংলাদেশের লিটন দাস। বলা যায়, ব্যাট হাতে একাই তিনি দলকে প্রায় জয় এনে দিচ্ছিলেন। অন্যপ্রান্ত কোনো সমর্থন না পেয়ে একাই লড়াই চালান লিটন। কিন্তু যে সমীকরণে জিতলে বাংলাদেশ সেমিতে খেলতে, সেই পথ অনেক আগেই খুঁইয়ে ফেলে বাংলাদেশ। আর তাই শেষের দিকে লিটন দাস শুধু কোনো মতো একটা জয়ের জন্যই চেষ্টা চালান। তবে এমনভাবে জিতলেও কোনো লাভ হবে না- সেটা জানা সত্ত্বেও কেন যে বাংলাদেশ ১২.১ ওভারেই জেতার সব চেষ্টা করল না, সেটাও বিস্ময়!
ম্যাচ জেতার ইচ্ছে নিয়ে ব্যাটিং শুরুও করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই লিটন দাসের এক ছক্কা ও চারে বাংলাদেশ ১৩ রান তুলে। কিন্তু পরের ওভারেই বিপত্তি। তানজিদ হাসান তামিম এলবিডব্লু হয়ে ফিরেন ০ রান। চলতি বিশ্বকাপে এটি সাত ম্যাচে তার তৃতীয় শূন্য! অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও আরেকবার ব্যর্থ। বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করলেও ফিরে যান পরের বলেই। সাকিব ফিরলেন গোল্ডেন ডাক হাঁকিয়ে। নাভিন উল হকের বলে ফিরতি ক্যাচ দিলেন শূন্য রানে। ২.৫ ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে এই ম্যাচে বাংলাদেশের পথচলা শুরু। সামনের পথ যে আরও কঠিন হয়ে গেল!
৩.৩ ওভারে বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারিয়ে ৩১ রান তুলতেই আরেকবার বৃষ্টি ঝাঁপিয়ে নামল আর্নস ভ্যালেতে। খেলা বন্ধ হয়ে গেল। বৃষ্টি আইনে তখন বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল আফগানিস্তানের চেয়ে। তবে খেলা অন্তত ৫ ওভার না পর্যন্ত বৃষ্টি আইনও কার্যকর হবে না। লিটন দাস ৮ বলে ১৩ এবং সৌম্য সরকার ৩ বলে ৬ রান নিয়ে খেলছিলেন। একে একে তাওহীদ হৃদয়, রিশাদ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কেউ ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়তে পারলেন না।
স্পিনার রশিদ খান ও পেসার নাভিন উল হক-এই দুজনে মিলেই মূলত বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সর্বনাশ করে দিলেন। রশিদ ২৩ রানে ৪ এবং নাভিন ২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের ম্যাচকে আনন্দ সাগরে পরিণত করেন।
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এখন ভারতের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড। অন্য সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে লড়বে আফগানিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: আফগানিস্তান ১১৫/৫ (২০ ওভারে, গুরবাজ ৪৩, জাদরান ১৮, রশিদ ১৯*, রিশাদ ৩/২৬, তাসকিন ১/১২)। বাংলাদেশ: (টার্গেট ১৯ ওভারে ১১৪), ১০৫/১০ (১৭.৫ ওভারে, লিটন দাস ৫৪*, হৃদয় ১৪, রশিদ ৪/২৩, নাভিন ৪/২৬)। ফল: আফগানিস্তান বৃষ্টি আইনে ৮ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: রশিদ খান।
