স্টেডিয়ামের বাইরে, খোলা আকাশের নিচে শুক্রবার রাতে নাটকীয় এবং অভিনব এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানই হয়ে গেল। চার দেয়ালে আবদ্ধ স্টেডিয়ামে না হয়ে ঐতিহাসিক সিন নদীতে অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধন হলো। যার শুরু হয় বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি ফুটবলার জিনেদিন জিদানের হাতে।
জিদান অলিম্পিক মশাল স্টেডিয়াম থেকে হাতে নিয়ে প্যারিসের জ্যাম ঠেলে, রেস্তোরাঁর ভিড় মাড়িয়ে মেট্রোতে করে রওনা দেন। আর ওই মেট্রোর জানালা দিয়েই তিন শিশুর হাতে তুলে দেন গেমসের সেই মশাল। যা নিয়ে তারা একটি ছোট্ট নৌকায় করে পৌঁছান সিন নদীতে। শুরু হয়ে যায় বিশ্ব ক্রীড়ার মহামিলন মেলা।
সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত এই শহরে আরও একবার জ্বলেছে অলিম্পিকের মশাল। ফলে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সর্ববৃহৎ এই আসর সর্বোচ্চ তিন বার আয়োজনে লন্ডনের সমকক্ষ এখন প্যারিস।
আধুনিক অলিম্পিকের যাত্রা ১৮৯৬ সালে। প্রথম অলিম্পিকের পরের আসরই হয়েছিল ফ্রান্সের প্যারিসে। ১৯০০ সালের পর অলিম্পিক আয়োজনে ফ্রান্সকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দুই যুগ। ১৯২৪ সালের পর তৃতীয় বারের মতো প্যারিসে অলিম্পিক আয়োজন, তাতে এবার অপেক্ষা ঘুচেছে ১০০ বছরের।
১০০ বছর পর ভালোবাসার নগরী অলিম্পিক মশালের আলোয় আলোকিত হওয়ার আগে ১০০ বছর বয়সী চার্লস কোস্তেকে হাজির করা হয় হুইল চেয়ারে করেই। ১৯৪৮ অলিম্পিকের সাইক্লিংয়ে সোনাজয়ী ও ফ্রান্সের সবচেয়ে বেশি বয়সী বেঁচে থাকা সোনাজয়ী এই সাইক্লিষ্ট অলিম্পিকের মশাল তুলে দেন জুডোকা টেডি রেনার ও সাবেক স্প্রিন্টার মেরি-হোসে পেরেককে। তারা দুজন মশাল প্রজ্জ্বলন করেন।

সিন নদীতে লাখ লাখ লোকের সমাগম হয় জাঁকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে। দুই লাখ মানুষকে পাস দেওয়া হয়েছে। এক লাখ লোক টিকিট কেটে অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন। টিকিটের মূল্য আট হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা। গেমসের সব টিকিট বিক্রি হয়।
জলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি শহরের পূর্ব থেকে পশ্চিমে ছয় কিলোমিটার নদীপথে হয়েছে। অস্টারলিৎজ ব্রিজ থেকে প্যারেড শুরু হয়ে শেষ হয় ট্রসেডারো ব্রিজের কাছে। পথে মেলে আরও কয়েকটি ব্রিজ। পার্ক আরবাইন লা কনরোড, এসপ্ল্যানেড দেস ইনভালিডেস, গ্রাঁ পালাইসের মতো অলিম্পিকের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের পাশ দিয়ে যায় প্যারেড।
উদ্বোধন প্যারেডে বিশ্বের সাত হাজার ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করেন। ৯৪টি নৌকা বহন করে খেলোয়াড়দের। যদিও প্যারিস অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার অ্যাথলেট। সিন নদীর কোলঘেঁষেই আইফেল টাওয়ার। আইফেল টাওয়ার জুড়ে আলোর খেলা দেখা যায়। ফ্রান্সের বিভিন্ন তারকাদের হাতে ঘুরল অলিম্পিকের মশাল। শেষে গান গাইলেন সেলিনে ডিয়ন। ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও গান গেয়েছিলেন তিনি।
জমকালো উদ্বোধনের সব আয়োজন যখন সম্পন্ন, তার ঠিক আগ মুহূর্তে নামে বৃষ্টি। ফলে কিছুক্ষণের জন্য অনুষ্ঠানস্থল ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
