ঢাকা
বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

হার্ট এ্যাটাক থেকে বাঁচতে মন ভালো রাখা জরুরি

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৪ পিএম

মন ভাঙলে মুষড়ে পড়ে মানুষ। দেহে আঘাত না লাগলেও মনে আঘাত লাগলে সেই ধাক্কা সামলাতে কেটে যায় অনেকটা সময়। দুঃখ সইবার ক্ষমতাও সকলের সমান নয়। কারও দুঃখ-শোক মনের ভিতরে ভারি পাথরের ন্যায় চেপে থাকে দীর্ঘদিন। কেউ আবার দ্রুতই দুঃখ ভুলে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসেন। 

দুঃখ নিয়ে কেন এত কথা? কারণ এই দুঃখের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে হার্ট অ্যাটাকের। সম্প্রতি এমন তথ্য তুলে ধরেছেন চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। বয়স্কদের পাশাপাশি অল্প বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে। কী কারণে সাম্প্রতিক সময়ে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা এত বেড়েছে তা নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। 

কি কি কারণে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে তা নিয়ে সম্প্রতি চমকে যাওয়ার মতো তথ্য তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকরা। দুঃখ পেলে মানুষের মন ভাঙে। আর এই 'মনের' সংযোগ হার্ট বা হৃদয়ের সঙ্গে। এটি শুধুমাত্র কথার কথাই নয়, এর পিছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক তথ্যও, জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমীরাতের চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি চিকিৎসকদের কল্যাণে প্রাণে বাঁচেন ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা। চিকিৎসকরা লক্ষ্য করেছিলেন তাঁর হার্টে একাধিক ব্লকেজ আছে। বারংবার হার্টে ব্লকেজ ধরা পড়ছিল বৃদ্ধার। বিষয়টির পিছনের কারণও অনুসন্ধান করেন চিকিৎসকরা। তাঁরা জানতে পারেন, বৃদ্ধা সাম্প্রতিক সময়ে চরমভাবে মানসিক ধাক্কা খেয়েছেন। মেডিক্যাল ইমার্জেন্সির কারণে তাঁর মেয়ের আঙুল কেটে বাদ দিতে হয়। আর এই বিষয়টিতেই মানসিক দিক থেকে ধাক্কা খান বৃদ্ধা। যার প্রভাব পড়ে হৃদযন্ত্রে।

শারজাহর কুয়েত হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ও কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. করিম মুস্তাফার কথায়, 'দুঃখ স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় যা করোনারি ধমনীকে সংকুচিত করে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।' এই হরমোনগুলি অস্থায়ীভাবে হৃৎপিণ্ডের কাজে বাঁধা দেয় ও সেই কাজকে প্রভাবিত করে। এই হরমোনগুলি হার্টের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য দায়ী ও নির্দিষ্ট কয়েকটি হার্ট সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বাড়ায়।

ডা. মুস্তাফা বলেন, 'গুরুতর দুঃখের সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের কোষে দুটি অণুর মাত্রাবৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে, যা ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম বা হার্ট ডিজিজ-এর প্রবণতা বাড়ায়। এই সিন্ড্রোমটি ঘটে যখন হৃৎপিণ্ডের পেশী হঠাৎ দুর্বল হয়ে যায় এবং বাম হার্টের ভালভের আকৃতির পরিবর্তন ঘটায়।'

৭০ বছর বয়সি বৃদ্ধা ওই রোগীর উদাহরণ টেনে কুয়েত হাসপাতালের চিকিৎসক আহমেদ খালেদ জানান, তাঁর মেয়ে জটিল রক্ত সঞ্চালন রোগে ভুগছিলেন। এই রোগের প্রভাব পড়েছিল তাঁর হাতে। হাতের আঙুলে গ্যাংগ্রিন হয়েছিল তাঁর। যার ফলে তা অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়। এই ঘটনার পর ওই মহিলার মা তথা ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা সংযুক্ত আরব আমীরাতে যান। যখন তাঁকে জানানো হয় মেডিক্যাল ইমার্জেন্সির কারণে মেয়ের হাতের আঙুল কেটে বাদ দিতে হয়েছে তখন মানসিকভাবে আঘাত পান তিনি। কান্নাকাটি শুরু করেন, আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। আর ঠিক এই ঘটনার পরই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তার। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মেডিকেল পরীক্ষায় একটি বিশাল হার্ট অ্যাটাক, রক্ত সঞ্চালনে দ্রুত পতন এবং রক্তচাপের তীব্র হ্রাসের বিষয়গুলি লক্ষ্য করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে অবশ্য প্রাণে বাঁচেন বৃদ্ধা। বৃদ্ধার অবস্থার উন্নতি হলে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

যারা দীর্ঘস্থায়ী মায়ো কার্ডিয়াক ইনফেকশন বা গুরুতর করোনারি ধমনীর কোনও সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের কাছে যদি কোনও দুঃখের খবর আচমকা পেশ করা হয় তবে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। চিকিৎসক মুস্তাফার পরামর্শ, 'যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের আচমকা কোনও দুঃখের কথা না বলাই ভালো। বরং কোনও দুঃখের সংবাদ তাঁদের দিতে হলে তা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে নির্বাচিত শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমেই দেওয়া উচিত। যে শব্দ তাঁদের মানসিক আঘাত দিতে পারে তা না ব্যবহার করাই শ্রেয়।

মনোবিজ্ঞানী তথা থেরাপিউটিক সাইকোলজি অনুশীলনকারী এবং হাসপাতালের ডিরেক্টর আফরা সালেমের কথায়, 'কিছু মানুষের দুঃখের সংবাদ সহ্য করার মানসিক ক্ষমতা নেই। কোনও দুঃখের খবর পেলে তাঁরা চেতনা হারাতে পারে, পক্ষাঘাত, স্ট্রোক, মানসিক মিউটিজম এবং এমনকি পেটের আলসারও হতে পারে।'

RY/WA
আরও পড়ুন