যেখানে পৃথিবীর নানা প্রান্তে গাড়ির গতি বাড়ছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হিউরন হ্রদের মাঝে অবস্থিত মাকিনাক দ্বীপ (Mackinac Island) রয়ে গেছে ব্যতিক্রমী এক বাস্তবতায়। এই দ্বীপে আজও নেই কোনো মোটরগাড়ি। হর্নের বদলে শোনা যায় ঘোড়ার খুরের টগবগ শব্দ আর পাখির ডাক।
মাত্র ৬০০ মানুষের বসবাস এই দ্বীপে, আর ঘোড়ার সংখ্যা প্রায় সমান। দ্বীপের বাসিন্দা ও দোকানদার উরভানা ট্রেসি মোর্স বলেন, ‘এখানে ঘোড়াই রাজা। গাড়ি নয়, ঘোড়ার গাড়িতেই আমাদের জীবন চলে।’

এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৮৯৮ সালে একটি গাড়ির ব্যাকফায়ারে আতঙ্কিত হয়ে ঘোড়াগুলোর বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এরপরই দ্বীপ কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি ইঞ্জিনচালিত যানবাহন নিষিদ্ধ করে, এবং আজও সেই নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মানা হয়। এমনকি গলফ কার্ট ব্যবহার করাও এখানে নিষিদ্ধ।
প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখ পর্যটক ভিড় জমান এই গাড়িবিহীন দ্বীপে। চলাচলের জন্য ঘোড়ার গাড়ি, সাইকেল এবং পায়ে হাঁটাই প্রধান ভরসা। পর্যটকদের জন্য দ্বীপজুড়ে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার সাইকেল ভাড়া কেন্দ্র।
দ্বীপের ৮০ শতাংশ এলাকাই মাকিনাক আইল্যান্ড স্টেট পার্কের আওতায়, যেখানে রয়েছে প্রাচীন বন, আর্ক রক, ও মনোরম হাঁটার পথ।

১৭৮০ সালে ব্রিটিশরা দ্বীপে একটি দুর্গ নির্মাণ করে, যা আজও ইতিহাসপ্রেমী দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। সেখানে ক্যানন ফায়ারিং প্রদর্শনী ও ঐতিহাসিক ভবন ঘুরে দেখা যায়।
এছাড়া, দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ ১৩৮ বছরের পুরনো গ্র্যান্ড হোটেল, যা এখনো রাজকীয় সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যে পর্যটকদের মুগ্ধ করে চলেছে।
শীতকালে দ্বীপ বরফে ঢেকে যায় এবং ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। তবে বসন্ত ও গ্রীষ্মে দ্বীপে ফিরে আসে প্রাণ ও উৎসব। তখন অনুষ্ঠিত হয় রঙিন লাইলাক ফেস্টিভ্যাল, আর রাতের আকাশ দেখা যায় ফোর্ট হোল্মস থেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা হান্টার হোগল্যান্ড বলেন, ‘ঘোড়া ছাড়া এখানে জীবন কল্পনাই করা যায় না। খুরের শব্দ শুনলে মনে হয় অতীতে ফিরে গেছি।’
সূত্র- বিবিসি
যে মাছের ডিম বিশ্বের সবথেকে দামি খাবার
অবহেলিত প্রাণীর জন্য শহরে এলো আশার গাড়ি