বিশ্ববাজারে বাংলাদশের প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি আয়ে ভাল নেই। খাতটি থেকে চলতি অর্থবছরের নয় মাসে রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এই সময়ে খাতটি থেকে সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৭ কোটি এক লাখ মার্কিন ডলার। এতে করে রপ্তানি আয় কমেছে ৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার ডলার বা ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ। গত অর্থবছরে একই সময়ে আয় হয়েছিল ৪০ কোটি ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ফলে আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে আয় কমেছে ১ কোটি ১১ লাখ ডলার বা ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( ইপিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) নয় মাসে (জুলাই’২৩ থেকে মার্চ’২৪) রপ্তানি আয়ের মধ্যে প্রকৌশল পণ্যের মধ্যে ছিল আয়রণ স্টিল (লৌহা ইষ্পাত), কপার ওয়্যার (তামার তার), স্টেনলেইস স্টিল ওয়্যার, ইঞ্জিনিয়ারিং ইকুইপমেন্ট (প্রকৌশল সরঞ্জাম), ইলেক্ট্রিক প্রোডাক্ট (বৈদ্যুতিক পণ্য) ও বাইসাইকেল। এসব পণ্যের মধ্যে কপার ওয়্যার, স্টেনলেইস স্টীল ওয়্যার, ইলেক্ট্রিক প্রোডাক্টে আয় বাড়লেও কমেছে আয়রণ স্টিল, ইঞ্জিনিয়ারিং ইকুইপমেন্ট ও বাইসাইকেল রপ্তানিতে।
ইপিবি তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে বাইসাইকেল রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার। যা আগের অর্থবছর (২০২২-২৩) রপ্তানি আয় হয়েছিল ১১ কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এতে করে চলতি অর্থবছরে আয় কমেছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ৪২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে এই পণ্যটিতে সরকারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে ৪৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।

বৈদ্যুতিক পণ্য: ইলেক্ট্রিক প্রোডাক্টে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ১৪ লাখ ৮ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছরে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বা ৭৫ লাখ ১২ হাজার ডলার। আর গত অর্থবছরের নয় মাসে আয় ছিল ৮ কোটি ৬৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এতে চলতি অর্থবছরের নয় মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ।
প্রকৌশল সরঞ্জাম: পণ্যটির খুচরা যন্ত্রাংশ চলতি অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় আয় কমেছে ৬২ লাখ ১০ হাজার ডলার বা ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে আয় হয়েছে ৬ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। আর সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার। কমেছে ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
আয়রণ স্টিল: পণ্যটি বিদেশে রপ্তানি হয়েছে ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার। যা আগের অর্থবছরে হয়েছিল ৫ কোটি ২১ লাখ ডলার। এতে করে আয় কমেছে ২৭ লাখ ১০ হাজার ডলার বা ৫ দশমিক ২০ শতাংশ। সরকারের এই পণ্যটিতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ কোটি ৬৭ লাখ ১০ হাজার ডলার।

কপার ওয়্যার: এ পণ্য থেকে নয় মাসে আয় হয়েছে ৪ কোটি ১৫ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। আর সরকার থেকে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এতে সরকাররে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫ শতাংশ এবং আগরে অর্থবছরের তুলনায় আয় বেড়েছে ৮ শতাংশ।
এছাড়া অন্যান্য প্রকৌশল পণ্যে চলতি অর্থবছরের নয় মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ কোটি ৬২ লাখ ১০ হাজার ডলার। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৩ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার ডলার। এতে আয় বেড়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার বা ৫১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৪.৯০ শতাংশ বেশি।
এদিকে সর্বশেষ অর্থবছরে (২০২২-২৩) জুন শেষে খাতটি থেকে রপ্তানি আয় এসেছিল ৫৮ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
এ খাতের সংশ্লষ্টি অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা জানান, উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে শুধু দুই চারটি খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে চলবে না। বিলিয়ন ডলারের খাত হিসেবে রপ্তানি পণ্য তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে ইলেক্ট্রনিক, হালকা প্রকৌশল পণ্য এবং আইটিসহ অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের দিকেও। সময় গড়ানোর সাথে সাথে রপ্তানি আয় বাড়ছে ঠিকই, তবে বড় আকারে বাড়েনি বিভিন্ন খাতের রপ্তানি পণ্যের পরিসর। আবার দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকেই। অন্যান্য খাত থেকে পণ্য রপ্তানি হলেও মূলত একটি খাতের ওপর ভর করেই এগোচ্ছে দেশের রপ্তানি খাত।
অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা আরো জানান, বিশ্ববাজারে অন্য রপ্তানিকারক দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হলে ইলেকট্রনিক, হালকা প্রকৌশল পণ্য এবং আইটি ও প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে বাংলাদেশেকে। বড় শিল্পের ছোট ছোট আধুনিক যন্ত্রাংশ তৈরিতে গুরুত্ব দিতে হবে বাংলাদেশকে। একইসঙ্গে বাড়াতে হবে দক্ষতা।
