ঢাকা
শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কারখানা বন্ধের ধাক্কা: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পেশা বদলে টিকে থাকার লড়াইয়ে

আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম

পোশাক শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বুকে নেমে এসেছে এক অদৃশ্য অন্ধকার। আশুলিয়ার একাধিক বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যেন দিশেহারা। তাদের অনেকেই বাধ্য হয়েছেন পেশা বদলাতে, আবার অনেকে লোকসানের বোঝা নিয়ে ধুঁকছেন।

গাইবান্ধা থেকে জীবিকার খোঁজে আশুলিয়ায় আসা এক মুদির দোকানদার বলেন, গার্মেন্টসের চাকরি থেকে জমানো টাকা আর ঋণ নিয়ে ছোট্ট দোকান চালু করেছিলেন তিনি। কিন্তু কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে দোকানের ক্রেতা হারিয়ে যায়, বাকির টাকা উঠানো যায়নি, ফলে দোকান বন্ধ করে এখন তিনি অটোরিকশা চালাচ্ছেন।

‘দোকানে যেসব শ্রমিক বাকিতে জিনিস নিত, কারখানা বন্ধ হবার পর তারা অন্যত্র চলে যায়। টাকা ওঠেনি, দোকান বন্ধ হয়েছে, এখন অটো চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি,’ বলেন তিনি।

বুড়িবাজার এলাকার আরেক মুদি দোকানি  বলেন, ‘আশুলিয়ার একাধিক কারখানা  ছিল আমাদের এলাকার প্রাণ। কিন্তু মালিক পালিয়ে যাওয়ার পর শ্রমিকরা চলে গেলে দোকানে বেচাবিক্রি একেবারে কমে যায়। আগে দুইজন কর্মচারী রাখতাম, এখন একাই চালাই। মনে হচ্ছে, শিগগিরই দোকান বন্ধ করতে হবে।’

কবিরপুর এলাকার আরেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, গার্মেন্টসে শত শত শ্রমিক কাজ করত, তাদের ঘিরেই আমাদের দোকানের রুটি-রুজি চলত। এখন সেই চেহারা নেই। অনেকে বাকির টাকা না দিয়ে চলে গেছে, ব্যবসায়ীরা পথে বসেছে, কেউ কেউ পেশা বদল করেছেন।

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, চলতি বছর দোকানিদের ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ‘যেসব এলাকায় কারখানা বন্ধ হয়েছে, সেসব জায়গায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কমছে। দেনা-পাওনার হিসাব বেড়েছে কয়েকগুণ। অনেকে ঋণের দায়ে জর্জরিত হয়ে দোকান গুটিয়ে নিচ্ছেন,’ বলেন তিনি।

শ্রমিক নেতা খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, একটি অঞ্চলের গার্মেন্টস বন্ধ হলে শুধু শ্রমিকরাই নয়, স্থানীয় ব্যবসায়ী, বাড়িওয়ালা, পরিবহন শ্রমিক সবার ওপর প্রভাব পড়ে। আশুলিয়াতেও আমরা একই চিত্র দেখছি। কারখানাগুলো যদি আবার চালু করা যায়, তাহলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন।

একটি শিল্প এলাকার অর্থনৈতিক চক্র কেবল কারখানা আর শ্রমিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে হাজারো ছোট ব্যবসা, যেগুলো ক্ষুদ্র বিনিয়োগে তৈরি হয়, কিন্তু বৃহৎ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল থাকে। ফলে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষতি শুধু উদ্যোক্তার নয়, পুরো এলাকার সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর আঘাত হানে।

এই প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কেবল নতুন বিনিয়োগ নয়, বন্ধ হয়ে যাওয়া শিল্পগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকদের মধ্যে সমন্বয় করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া গেলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আবারও প্রাণ ফিরে পেতে পারে।

Raj/FJ
আরও পড়ুন