ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

নতুন নোটে অনিয়ম, গ্রাহক হয়রানি চরমে

আপডেট : ০৬ জুন ২০২৫, ০৯:৫৬ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নতুন টাকার ঘাটতি এবং খোলা বাজারে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এবিষয়ে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ঈদুল আজহা সামনে রেখে বিতরণের জন্য প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে শত শত কোটি নতুন টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কিছু ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা এই টাকা সাধারণ গ্রাহকের মধ্যে বিতরণ না করে- অধিক লাভের আশায় তা সরবরাহ করছেন খোলাবাজারে। ফলে ব্যাংকে গিয়ে হতাশ হয়ে অনেক গ্রাহক চড়া দামে খোলাবাজার থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করছেন।

গত মঙ্গলবার ও বুধবার রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, কৃষি ও ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও নতুন টাকা বিতরণের কার্যক্রম ছিলো না।

অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছর ঈদ উপলক্ষে মোট ৫২০ কোটি টাকার নতুন নোট ছাপানো হয়েছে, এবং প্রায় সব টাকাই বিভিন্ন ব্যাংকে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে কোন ব্যাংকে কত টাকা দেয়া হয়েছে- এবিষয়ে জানতে চাইলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার কাছে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

খোলাবাজারে নতুন টাকার রমরমা ব্যবসা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ফুটপাতজুড়ে প্রায় ডজনখানেক বিক্রেতা ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোটের বান্ডিল নিয়ে বসে আছেন। একজন বিক্রেতার কাছেই দেখা গেছে অন্তত ৪-৫ লাখ টাকার নতুন নোট। কেউ কেউ স্টকে থাকা নোট শেষ হয়ে গেলে- কাছাকাছি কোথাও গুদামজাতকৃত নতুন টাকা নিয়ে এসে আবার বিক্রি শুরু করছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তৈরি করা নতুন ২০ টাকার একটি বান্ডিল (মূল্য ২,০০০ টাকা) বিক্রি হচ্ছে ৩,৫০০ টাকায়—অর্থাৎ অতিরিক্ত ১,৫০০ টাকা লাভ। ৫০ টাকার বান্ডিল (মূল্য ৫,০০০ টাকা) বিক্রি হচ্ছে ৭,০০০ টাকায়, ফলে প্রতি বান্ডিলে ২,০০০ টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছেন তারা। এমনকি ১,০০০ টাকার প্রতি বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ১,০৫,০০০ থেকে ১,১০,০০০ টাকায়।

গত মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় কোনও গ্রাহককে নতুন টাকা নিতে দেখা যায়নি। ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা যে পরিমাণ টাকা পেয়েছি, তা একেক শাখায় এক লাখ করে পাঠানোর মতো নয়।

অগ্রণী ব্যাংকে নতুন টাকা নিতে আসা গ্রাহক আল-আমিন জানান, চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, শেষে পেয়েছি মাত্র ১০ হাজার টাকার নতুন নোট, তাও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাপানো নোট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নোট পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, সপ্তাহের শুরু থেকেই ব্যাংকগুলোকে নতুন টাকা সরবরাহ করা হয়েছে। অথচ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, অধিকাংশ ব্যাংকই এই টাকা সাধারণ গ্রাহকের হাতে পৌঁছায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে, কিছু ব্যাংক নতুন টাকা গ্রাহকের মাঝে না দিয়ে অসাধু উপায়ে খোলা বাজারে ছেড়েছে। তারা প্রতি বান্ডিলে অবৈধভাবে ৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করেছে।

আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমাদের আত্মীয়-স্বজনরাও নতুন টাকার জন্য অনুরোধ করেন, কারণ আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কাজ করি। অথচ নিজেরাও চাহিদামতো টাকা পাইনি। এবছর সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে, যেখানে অন্যান্য বছরে ৫০ হাজার টাকার নতুন নোট দেয়া হতো।

ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নতুন টাকার ঘাটতি এবং খোলা বাজারে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এবিষয়ে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তারা আরও জানান, এভাবে খোলাবাজারে নতুন টাকা বিক্রির কোনো বৈধতা নেই। আমরা অচিরেই কঠোর ব্যবস্থা নেব। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত কোড অনুসরণ করে নতুন টাকা সরবরাহ করতে বলা হবে। ভবিষ্যতে যদি [খোলাবাজারের] দোকানিদের হাতে এসব নোট পাওয়া যায়- তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

SN
আরও পড়ুন