ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কলকাতায় মমতার ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভারতের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি বিদ্বেষ, বাঙ্গালিদের উপর হেনস্থা, বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাসের প্রতিবাদে সম্প্রতি ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি।
গত প্রায় এক মাস ধরে কলকাতার মেয়ো রোডে মহাত্মাগান্ধীর পাদদেশে মঞ্চ তৈরি করে প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে আসছিল তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু হঠাৎ করেই সোমবার সেই মঞ্চ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে।
মঞ্চ খুলে ফেলার খবর পেয়েই সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্ন থেকে মমতা ছুটে আসেন মেয়ো রোডে। ভাঙ্গা মঞ্চস্থলে দাঁড়িয়েই মমতা বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি।’
ছাদ খোলা মঞ্চের তলায় দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘আমরা সব অন্যায়, অত্যাচারের প্রতিবাদ করি। আমি যখন এখানে আসছিলাম তখন দেখলাম প্রায় ২ শতাধিক সেনাবাহিনী সদস্য আমাকে দেখে ছুটে পালাচ্ছিল। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা কেন ছুটে পালাচ্ছেন?’
তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাদের বন্ধু। আমরা আপনাদের জন্য গর্বিত। এটা আপনাদের দোষ নয়। আপনারা বিজেপির কথায় করেছেন, দিল্লির কথায় করেছেন, কেন্দ্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নির্দেশে করেছেন। এটুকু বুদ্ধি আমাদের আছে। আমি সেনাবাহিনীকে কোনো দোষ দিচ্ছি না। আমি বিজেপি ও তাদের মন্ত্রীদেরকে দোষারোপ করছি। তারা যদি এভাবে সেনাবাহিনীকে অপব্যবহার করে আমাদের মত একটি রাজনৈতিক দলের মঞ্চ ভেঙে ফেলে, স্টেজ, মাইক্রোফোন খুলে ফেলে...।’
মমতা আরো বলেন, ‘সেনাবাহিনীর উচিত ছিল এ ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের সাথে কথা বলা। এরপর কলকাতার পুলিশ কমিশনার আমাদের দলের সাথে কথা বলতো, যদি কোন আপত্তি থাকতো আমি এক মিনিটের মধ্যে সেটা খুলে দিতাম, আমার কোনো সমস্যা ছিল না।’
সচিবালয় থেকে এদিন মমতার সঙ্গে মেয়র রোডে আসেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, রাজ্যের যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, দলের বিধায়ক দেবাশীষ রায়, মদন মিত্র, কলকাতা পৌরসভার কাউন্সিলর বৈশানর চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। মমতা আসার সাথে সাথেই প্যান্ডেল খেঙে ফেলার কাজ বন্ধ রাখে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
তবে মেয়ো রোডে ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ খুলে দেওয়ার পর কলকাতার ধর্মতলায় রানী রাসমণি রোডে নতুন করে মঞ্চ বেঁধে তৃণমূলের ভাষা আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মমতা। সেক্ষেত্রে কেবলমাত্র শনিবার ও রোববার নয়, এবার সাত দিনই ভাষা আন্দোলন চলবে।
যদিও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দুদিনের জন্য মঞ্চ বাধার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রায় এক মাস ধরে মঞ্চ বাধা রয়েছে। তিনদিনের বেশি অনুষ্ঠান হলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের থেকে অনুমতি নিতে হবে।
অস্থায়ী কাঠামো খুলতে আয়োজকদের বেশ কয়েকবার রিমাইন্ডার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাও সরানো হয়নি। কাঠামো সরাতে সেনাবাহিনীর তরফে কলকাতা পুলিশকে জানানো হয়েছিল, তারপরেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশী’ আখ্যা দিয়ে দেশছাড়া করতে দেবো না : মমতা 