রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ অবসানে একটি শান্তি চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে 'সাধারণ সমঝোতা' হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। খবর বিবিসি'র।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে ২৮ দফার একটি প্রস্তাব দেয়। সপ্তাহের শেষে জেনেভায় আলোচনার মাধ্যমে মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা পরিকল্পনাটি নিয়ে কাজ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ‘দুই পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে মূল পরিকল্পনাটি কিছুটা ‘ফাইন-টিউন’ [আরও ভালো] করা হয়েছে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি আমার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে মস্কোতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দিয়েছি। একই সময়ে আর্মি সেক্রেটারি ড্যান ড্রিসকল ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে বৈঠক করবেন।’
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আশা প্রকাশ করেছেন, ড্রিসকল চলতি সপ্তাহেই কিয়েভ সফর করবেন।
এদিকে ক্রেমলিন আগেই জানিয়েছিল, চুক্তির নতুন খসড়া নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। তারা সতর্ক করে বলেছে, গত সপ্তাহে উপস্থাপিত পরিকল্পনায় কোনো সংশোধনী আনা হলে মস্কো তা মেনে নাও নিতে পারে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সতর্ক করে বলেন, মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক কাঠামোর পক্ষে ছিল। তবে সেখানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হলে পরিস্থিতি ‘মৌলিকভাবে ভিন্ন’ হয়ে যেতে পারে। ল্যাভরভ জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ক্রেমলিন নতুন পরিকল্পনার কোনো কপি হাতে পায়নি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ইউরোপকে দায়ী করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা রাশিয়ার উদ্বেগ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে সোমবার ও মঙ্গলবার আবুধাবিতে ড্যান ড্রিসকল ও রুশ প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে।
জানা গেছে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এখনো গভীর মতভেদ রয়েছে। এর মধ্যে কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং পূর্ব ইউক্রেনের সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বড় দুই ইস্যু, যেগুলোর সমাধান এখনো হয়নি।
মঙ্গলবার জেলেনস্কি জানান, স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তুত। তার প্রশাসন চলতি মাসের শেষ নাগাদ এই বৈঠকের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। জেলেনস্কি বলেন, আমি আমেরিকার সঙ্গে আরও সক্রিয় সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছি। অনেক কিছুই আমেরিকার ওপর নির্ভর করে, কারণ রাশিয়া সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেয় আমেরিকার শক্তির দিকেই।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয়ে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, তিনি জেলেনস্কি ও পুতিনের সঙ্গে শিগগিরই দেখা করার অপেক্ষায় আছেন, তবে তা কেবল তখনই হবে যখন যুদ্ধ বন্ধের চুক্তিটি চূড়ান্ত হবে বা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে।
হোয়াইট হাউসের এমন আশাবাদের পরও ইউরোপীয় নেতারা সন্দিহান, প্রায় চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধের পর শান্তি আদৌ এখন হাতের নাগালে কি না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানিয়েছেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির কোনো ইঙ্গিত তিনি দেখছেন না। যুক্তরাজ্যের ডাউনিং স্ট্রিটও সতর্ক করে বলেছে, সামনে এখনো কঠিন ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে চলমান কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যেই মঙ্গলবার ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো—যারা 'কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং' নামে পরিচিত—একটি জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও অংশ নেন। নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে একটি বিশেষ 'টাস্ক ফোর্স' গঠনের বিষয়ে সম্মত হন। শান্তি চুক্তি হলে ইউক্রেনকে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হবে—এ বিষয়ে দ্রুত কাজ এগিয়ে নেওয়াই হবে এই টাস্ক ফোর্সের মূল কাজ।
নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে চলমান মতভেদের কেবল একটি অংশ। সোমবার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানান, শান্তির পথে 'প্রধান বাধা' হলো পুতিনের দাবি। রুশ প্রেসিডেন্ট চান, রাশিয়া ইউক্রেনের যেসব ভূখণ্ড দখল করেছে, সেগুলোর আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল (যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত) থেকে ইউক্রেনকে সম্পূর্ণভাবে সরে যেতে হবে। পাশাপাশি রুশ বাহিনী বর্তমানে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এবং খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
কূটনৈতিক আলোচনা চললেও যুদ্ধক্ষেত্রে সংঘাত থামেনি। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে জাপোরিঝিয়ায় হামলা চালানো হয়েছে।
সেখানকার ইউক্রেনীয় আঞ্চলিক প্রধান আইভান ফেদোরভ জানান, হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ক্রেমলিন-নিযুক্ত গভর্নর ইয়েভজেনি বালিৎস্কি অভিযোগ করেন, কিয়েভ তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার বিদ্যুৎ গ্রিডে হামলা চালিয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত বা আহত হয়েছেন। একইসঙ্গে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্টের ২৭ বছরের কারাদণ্ড
ভারতের গণতন্ত্র বিদেশ থেকে ধার করা নয়
নেতানিয়াহুর ভারত সফর বাতিল
বিশ্ববাজারে কমলো জ্বালানি তেলের দাম, নেপথ্যে কারণ