ইরানি প্রেসিডেন্টের ঘোষণা

পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে না তেহরান

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১০ এএম

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ঘোষণা দিয়েছেন, তেহরান কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে না। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

পেজেশকিয়ানের এই ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি (ই-থ্রি) ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া শেষ করার দ্বারপ্রান্তে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ৩০ দিনের এই প্রক্রিয়া শেষ হবে।

ই-থ্রি দেশগুলোর অভিযোগ, তেহরান ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে তারা জানিয়েছে, ইরান যদি জাতিসংঘ পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার পুনঃস্থাপন করে, সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নিয়ে উদ্বেগ দূর করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়, তবে অন্তত ছয় মাস নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা যেতে পারে।

জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি লেখেন, চুক্তি এখনও সম্ভব। মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। ইরানের এখন আমাদের উত্থাপিত যৌক্তিক উদ্বেগগুলোর জবাব দেওয়া প্রয়োজন।

ইরান অবশ্য এর দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়দের ওপর চাপিয়েছে। তারা বলেছে, ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা সরে যাওয়া এবং এরপর বিমান হামলার ঘটনাই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

নিজের ভাষণে পেজেশকিয়ান অভিযোগ করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ভণ্ডামি করছে। তিনি বলেন, তারা নিজেদের সৎ পক্ষ হিসেবে তুলে ধরলেও আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে অবমূল্যায়ন করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় কাজ করেছে।

এর আগের দিন দেওয়া ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আবারও স্পষ্ট করে বলেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাও তিনি নাকচ করে দেন।

বিশ্লেষকদের মতে, নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ইরানের বিদেশি সম্পদ জব্দ হতে পারে, অস্ত্র চুক্তি স্থগিত হবে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও কঠোরভাবে সীমিত করা হবে।

জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান আরও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের আকস্মিক হামলার নিন্দা করেন। তার দাবি, এসব হামলায় ১২ দিনের সংঘাত শুরু হয়, যাতে বহু জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন এবং দেশটির প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে।

তিনি অভিযোগ করেন, ইসরাইলের বিমান হামলায় এক হাজারের বেশি ইরানি প্রাণ হারিয়েছে এবং দেশটির সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হয়েছে।

পেজেশকিয়ান বলেন, দেশপ্রেমিক ও সাহসী ইরানি জনগণ প্রমাণ করেছে যে আগ্রাসনের সামনে তারা কখনো মাথা নত করবে না। একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ইসরাইল প্রকাশ্যে ‘গ্রেটার ইসরাইল’ পরিকল্পনার কথা বলছে, যা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাফার জোন তৈরির কৌশল।

তার ভাষ্য, দুই বছরের গণহত্যা, গণ-অনাহার, দখলকৃত ভূখণ্ডে বর্ণবৈষম্য এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসনের পরও ইসরাইল এখনো এই অবাস্তব ও দুঃসাহসী পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে।

NB/SN