অবশেষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মেদিনীপুর বিভাগে বাঁকুড়ায় ধরা পড়ল সেই আতঙ্ক সৃষ্টি করা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বনরক্ষীদের দুঃসাহসিক অভিযানে সাতদিন পর অবসান হলো আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ‘জিনত’ নামের বাঘিনির মুক্ত চলাচল। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন’র।
এর আগে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে পুরুলিয়ার জঙ্গল থেকে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার গোঁসাইডিহি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল জিনত। বন বিভাগ জানিয়েছে, বাঘিনিকে কাবু করতে এদিন তাকে লক্ষ্য করে বার বার ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হয়। রাতভর জ়িনতকে খাঁচাবন্দি করার চেষ্টা করেন বনকর্মীরা কিন্তু কিছুতেই তাকে বন্দি করা যায়নি।
আবার জঙ্গলেই কোথাও লুকিয়ে পড়েছিল বাঘিনি। এর পর গোটা জঙ্গল ঘিরে ফেলে জায়গায় জায়গায় আগুন লাগিয়ে জিনতকে খাঁচাবন্দি করার কৌশল নেয়া হয়েছিল। এ কৌশলেই সাফল্য আসে। অবশেষে বনকর্মীদের জালে ধরা পড়ে বাঘিনি।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে ফের জিনতকে লক্ষ্য করে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়েন বনকর্মীরা। সেই গুলি লাগে বাঘিনির গায়ে। তাতেই কাবু হয় সে। পরে তাকে ধরে আনা হয়।
গত ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে তিন বছরের জিনতকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে আনা হয়েছিল। কয়েক দিন ঘেরাটোপে রেখে পর্যবেক্ষণের পরে গতিবিধি শনাক্তে রেডিও কলার পরিয়ে ২৪ নভেম্বর তাকে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হয়।
কিন্তু এরপরেই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আতংক ছড়িয়ে একের পর এক অবস্থান বদল করে বাঘিনি। কয়েক দিন ঝাড়খণ্ডে ঘুরে চাকুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবান্ধি এলাকা থেকে ঝাড়গ্রামের কাটুচুয়া জঙ্গলে ঢুকে পড়ে সে। তার পর ঝাড়গ্রাম থেকে বাঘিনি পৌঁছে যায় পুরুলিয়ার জঙ্গলে। শনিবার সকালে আস্তানা বদলে গোঁসাইডিহি গ্রামে পৌঁছায় জিনাত।
এদিন ভোরের দিকে বাঘিনির গর্জন শুনতে পান গ্রামবাসী। তার পায়ের ছাপও দেখা যায়। গ্রামবাসী নিশ্চিত হয়েছিলেন, লোকালয় থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার দূরে জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছে সে।
বাঘিনির রেডিও কলার সিগন্যাল ট্র্যাক করে সেখানে পৌঁছে যান বনকর্মীরাও। দ্রুত গোটা জঙ্গল ঘিরে ফেলা হয় নাইলন দড়ি দিয়ে। গ্রামবাসীদের উপর বাঘিনির হামলা ঠেকাতে গ্রামের রাস্তাও জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। জঙ্গলে একাধিক খাঁচা পাতার পাশাপাশি দু’টি মহিষকেও টোপ হিসাবে রাখা হয়েছিল। শেষমেষ ঘুম পাড়ানি গুলিতে অবসান ঘটে ‘বাঘবন্দি খেলার’।
