ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

আরজি কর মামলা

ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম: মমতা

`আমাদের হাতে থাকলে আমরা অনেক আগেই ফাঁসির রায় করিয়ে দিতে পারতাম। আমাদের হাত থেকে মামলাটি ইচ্ছা করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে ।’

আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩২ এএম

কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সঞ্জয় রায়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার এ রায়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'এই ধরনের নরপিশাচের চরমতম শাস্তি হওয়া উচিত।ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।’ খবর এনডিটিভির।
 
সোমবার (২০ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এ রায়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি বলেন, 'আমরা প্রথম দিন থেকে ফাঁসির দাবি করেছিলাম। এখনও তাই করছি। আদালতের রায় নিয়ে কিছু বলব না। আমরা তো তিনটে মামলায় ফাঁসির সাজা ঘোষণা করিয়ে দিয়েছি, ৫৪ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে। এই মামলাও আমাদের হাতে থাকলে অনেক আগেই মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করিয়ে দিতাম। কিন্তু কেসটা আমাদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এই ধরনের নরপিশাচের চরমতম শাস্তি হওয়া উচিত। ফাঁসি হলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম।'

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ রায়ে তিনি খুশি নন। জয়নগর, ফারাক্কা এবং গুড়াপের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৩টি ক্ষেত্রেই পুলিশ তদন্ত করেছে। পুলিশের চার্জশিটের ভিত্তিতে আদালত তাদের ফাঁসি দিয়েছেন। সেখানে এটি (আরজি কর মামলা) খুব গুরুতর বিষয়।

সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আমাদের হাতে থাকলে আমরা অনেক আগেই ফাঁসির রায় করিয়ে দিতে পারতাম। আমি জানি না কীভাবে আর কি যুক্তি দিয়েছে সিবিআই। সবটা তারাই করেছে। আমাদের হাত থেকে মামলাটি ইচ্ছা করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

গত ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট মধ্য কলকাতায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উদ্ধার হয়েছিল এক নারী চিকিৎসকের দেহ। অভিযোগ উঠেছিল, ওই চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত চিকিৎসক ৮ অগাস্ট পর্যন্ত টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটিতে ছিলেন, ওইদিন রাতে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তিনি পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান। পরদিন সকালে তার জুনিয়র সহকর্মীরা সেই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

নিহত তরুণীর পরিবার জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে অবশ্য তীব্র ক্ষোভের মুখে পুলিশ এই ঘটনায় খুন ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করে।

ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সঞ্জয় নামের এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে সিবিআই।

সিবিআই তদন্ত নিয়ে নিহতের মা-বাবার দাবি, সিবিআই একমাত্র সঞ্জয় রায়কেই দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। আদতে তারা কোনো কাজ করেনি। সঞ্জয় দোষী, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই ঘটনায় আরও অনেকে যুক্ত আছেন, যাদের ধরা হচ্ছে না।

আরজি কর মামলায় মোট ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে নিম্ন আদালতে। সেই তালিকায় রয়েছেন নিহত চিকিৎসকের পিতা, সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার, কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী অফিসার, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং নিহতের কয়েক জন সহপাঠী। প্রথমে ঘটনার তদন্তে নেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একাধিক ‘বায়োলজিক্যাল’ এবং ‘ডিজিটাল’ তথ্যপ্রমাণও সংগ্রহ করেছিল তারা।

পরে তদন্তভার পাওয়া সিবিআই ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকেই একমাত্র অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর গত ১১ নভেম্বর চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। তার ৯ সপ্তাহ বাদে শনিবার রায় ঘোষণা করা হলো।

ধর্ষণ-খুনের মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি করের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। যদিও অভিযোগপত্রে তাদের নাম রাখেনি সিবিআই। ওই মামলায় সন্দীপ ও অভিজিৎ জামিন পেয়েছেন। অভিজিতের জেলমুক্তি হলেও আরজি করে দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ এখনও কারাগারে রয়েছেন।

সিবিআইও তদন্ত চালিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ারকেই ‘একমাত্র অভিযুক্ত’ হিসাবে বর্ণনা করে আদালতে চার্জশিট পেশ করে। সেই চার্জশিটের ভিত্তিতে মামলার চার্জ গঠন করে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত ১১ নভেম্বর। 

আরজি করের ঘটনায় ‘ন্যায়বিচার’ চেয়ে মানববন্ধন, মশাল মিছিল হয়েছে। ১৪ অগস্ট ‘মেয়েদের রাত দখল’ হয়েছে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই রাতেই আবার ভাঙচুর হয়েছে আরজি কর হাসপাতালে। তার পর থেকে নাগরিক সমাজের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল দাবানলের মতো। প্রায় প্রতি দিনই সাধারণ মানুষ মিছিল করেছেন কলকাতার রাজপথে। মিছিল হয়েছে মফস্বল শহরেও।

FJ/NC
আরও পড়ুন