ব্যয় কমাতে আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেট তথা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার।
অন্যান্য বছরের মতো উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রধান লক্ষ্য না করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র মতে, আগামী ৬ মে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) খসড়া চূড়ান্ত করতে বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সভায় পরিকল্পনা সচিব, পরিকল্পনা বিভাগের অন্যান্য সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। বর্ধিত সভায় এডিপির খসড়া চূড়ান্ত হলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় অনুমোদন পাবে।
জানা যায়, আগের মতো এবারও অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরম্নত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দই আগামী অর্থবছরে কমছে। এদিকে সবচেয়ে কম বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত হলো প্রতিরক্ষা।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে সংশোধিত এডিপিতে তা কমিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেট মূল এডিপির তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম হলেও সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগগুলো চাহিদা দিয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে সরকারের অর্থায়ন ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, আর বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারের অর্থায়ন কমে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নামছে, আর বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৮৬ হাজার কোটি টাকায় নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতি বছরের বাজেটের অঙ্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে এডিপির বড় ভূমিকা থাকে। তবে এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে। প্রতি বছর উন্নয়ন বাজেটের আকার বাড়লেও বছর শেষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। চলতি অর্থবছরের মার্চ মাস শেষে উন্নয়ন বাজেটে এডিপি খরচ হয়েছে মাত্র ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এদিকে, গত ৯ মাসে ৮২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১২ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল এই সময়ে।
জানা গেছে, নতুন উন্নয়ন বাজেটে স্থানীয় সরকার বিভাগ চাহিদা দিয়েছিল ৪৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। তাদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৪০ হাজার ২৩ কোটি টাকা। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ৩৫ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। তাদের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৩১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ ১৮ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা চাহিদা দিলেও তারা ২০ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। এচাড়া রেলপথ মন্ত্রনালয় বরাদ্দ পাচ্ছে ১০ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য বিভাগ পাচ্ছে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পাচ্ছে ৮ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা।
