মহান বিজয় দিবস শুধু একটি স্মরণীয় দিন নয়। এটি ন্যায়, মানবিকতা ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার এক অনন্ত প্রেরণা। ৫৪তম মহান বিজয় দিবসে সেই চেতনাকেই বহুমাত্রিক রূপে ধারণ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজয় র্যালি, চিত্রাঙ্কণ ও চিত্র প্রদর্শনী, মানবিক খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি এবং বর্ণাঢ্য সাইকেল র্যালি। রঙ, স্লোগান ও মানবিক উদ্যোগে মিলেমিশে এক উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে বাঙালির গৌরবের এই দিন।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী এলাকা থেকে শুরু হয় বিজয় র্যালি। ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার আদর্শ এবং বিজয়ের স্পৃহা তুলে ধরেন নানা স্লোগানে। র্যালিটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিজয়ের বার্তা ছড়িয়ে দেয় সর্বত্র।
এরপর সকাল ১০টার দিকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিজয়ের রঙে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক চিত্রাঙ্কণ ও চিত্র প্রদর্শনী প্রতিযোগিতা। মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় দিবসকে বিষয়বস্তু করে শিক্ষার্থীরা রঙ-তুলিতে ফুটিয়ে তোলেন ত্যাগ, সংগ্রাম ও স্বাধীনতার আনন্দ। প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের পুরস্কৃত করা হয় এবং অংশগ্রহণকারী সকলের জন্য বিশেষ উপহারের ব্যবস্থা রাখা হয়।
কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন উৎসর্গ করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সেই শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আজ আমরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গভীরভাবে তুলে ধরতেই বিজয় র্যালি ও শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।’
জাকসুর সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘শিশুদের আঁকা ছবির মধ্য থেকে পাঁচটি সেরা চিত্র নির্বাচন করে পরবর্তীতে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরো জীবন্ত করে তুলবে।’
বিকেলে বিজয়ের আবহে নতুন মাত্রা যোগ করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বর্ণাঢ্য সাইকেল র্যালি। বিকেল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে র্যালিটি মীর মোশারফ হোসেন হল গেট দিয়ে ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক ঘুরে পুনরায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
জাতীয় পতাকা ও বিজয় দিবসের ব্যানার হাতে নিয়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। র্যালি শেষে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল ন্যায়, ইনসাফ ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। সেই চেতনাকে ধারণ করেই ছাত্রসমাজকে দেশ গঠনে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি আরো জানান, মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবেই এই সাইকেল র্যালির আয়োজন করা হয়েছে।
বিজয় দিবসের মানবিক দিকটিকে সামনে রেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের উদ্যোগে ক্যাম্পাসজুড়ে দুস্থ মানুষ ও রিকশাচালকদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত টিএসসি এলাকা, প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন সড়ক, বটতলা, শহীদ মিনার ও ডেইরি গেট এলাকায় এ কর্মসূচি পরিচালিত হয়। এতে প্রায় দুই শতাধিক দুস্থ মানুষ ও শ্রমজীবী রিকশাচালক খাবার গ্রহণ করেন।
এসময় জাবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনীক বলেন, ‘বিজয় দিবস আমাদের মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধকে নতুন করে জাগ্রত করে। ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পালন করাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। স্বাধীনতার সুফল যেন সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, এটাই ছিল আমাদের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। কর্মসূচিতে উপস্থিত নেতাকর্মীরা দেশপ্রেম, মানবিকতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
র্যালি, চিত্রাঙ্কণ, মানবিক সহায়তা ও সাইকেল মিছিল সব মিলিয়ে মহান বিজয় দিবসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যেন হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত এক জীবন্ত ক্যাম্পাস। ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন হলেও সবার লক্ষ্য ছিল এক স্বাধীনতার আদর্শকে ধারণ করে মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও দায়িত্বশীল সমাজ গঠনের প্রত্যয়।
বিজয়ের দিনে জাবির এই বহুমুখী আয়োজন নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি দেশপ্রেম ও সামাজিক দায়বদ্ধতার শক্ত বার্তাই পৌঁছে দিবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা ।
মেক্সিকোতে বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৭