ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি সাত দিন চিকিৎসাধীন থেকে মারা গেছেন। শোকে স্তব্ধ তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটির বসতভিটায় চলছে শোকের মাতম। তরুণ নেতার শূন্যতায় শোক আর কান্নায় ভেঙে পড়েছে পুরো গ্রাম। এমনকি হাদির শ্বশুরবাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জেও মাতম চলছে।
গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হাদিকে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান তিনি
নলছিটি পৌরসভার খাসমহল এলাকার টিনশেডের একটি সাধারণ ঘরেই ১৯৯৩ সালে জন্ম নিয়েছিলেন সৈয়দ শরিফ ওসমান হাদি। বাবা মাওলানা আবদুল হাদি ও মা তাসলিমা হাদির ঘরে ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হাদির বেড়ে ওঠা গ্রামেই। তবে এই ঘরে তিনি যেন এখন কেবল-ই ছবি। ঘাতকের গুলিতে চিরতরে বিদায় নেওয়ায়, শূন্যতার কালো ছায়ায় তার জন্মভূমি।

শৈশব থেকেই হাদি ছিলেন প্রতিবাদের এক কণ্ঠস্বর। নেছারাবাদ এন এস কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম শেষ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমির পাঠ চুকান। স্বজনদের পাশাপাশি গ্রামবাসীর কাছে হাদি যেন কেবল একটি নাম নয়, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠেন। তাইতো তার মৃত্যুর ঘটনা মানতে পারছেন না কেউই। কেউ অঝোরে কাঁদছেন আবার কেউ কাঁদছেন গুমরে গুমরে।
অন্যদিকে, বরিশালের বাবুগঞ্জে হাদির শ্বশুরবাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। অল্প বয়সে স্বামীহারা স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বজনরা। তাদের দাবি, হাদির মতো আর কোনো সন্তানের যেন এভাবে প্রাণ না ঝরে।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই চেনা-অচেনা বহু মানুষ ভিড় করেন হাদির ভাঙাচোরা ঘরের সামনেই। বাড়িতে থাকা হাদির বোনকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা পাচ্ছে না আগতরা। কেউ কেউ হাদির স্মৃতি আওড়াচ্ছেন আবার কেউ জানাচ্ছেন হাদি হত্যার বিচারের দাবি।
