কর্মপরিষদসহ জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ে ৪২ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘তবে এবারের জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে আমরা এখনো কাউকে মনোনয়ন দেইনি।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘স্টার নির্বাচনী সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। সংলাপে তিনি আগামীতে জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলনে এ আয়োজন শুরু হয়।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা নারীকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে চাই। সেই সম্মানের জায়গা হচ্ছে তার শিক্ষা, অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, নারীর সমাজ ও দেশ গঠনে অংশগ্রহণ। সব মিলে আমরা নারীদের সম্মান দিতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের নারী সমাজ গত দিনে যেভাবে অধিকার ও সমতার কথা বলেছি, নারীরা সেটি পায়নি।
তিনি বলেন, আমাদের দলের ভেতরে সবচেয়ে বেশি নারী নেতৃত্বের একোমোডেশন দিয়েছি। এটা রেকর্ডে আছে। আমরা সংস্কার কমিশনেও জমা দিয়েছি।
সংলাপে উপস্থিত সংস্কার কমিশনের দুজন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার ও ইফতেখারুজ্জামানের নাম উল্লেখ করে আযাদ বলেন, সংস্কার কমিশনের সংলাপে আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, ২০০৮ সালে যখন সরকার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের সুযোগ দিল অর্থাৎ নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করল, শর্ত আরোপ করা হলো যে, দলে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব বিভিন্ন পর্যায়ে থাকতে হবে। আমাদের দলে সেখানে ৪২ শতাংশ চর্চা একোমোডেশন আছে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের দলের বাইরে যদি সুযোগ পাই তাহলে আমরা যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি সেখানে নারী শিক্ষার বিকাশ ও নিরাপত্তা বিধান করা হবে। নারীর সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনি নিরাপত্তাও লাগবে। এগুলো আমরা নিশ্চিত করব যাতে করে অতীতের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। নারীদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে নারীর জন্য আমরা আলাদা প্রকল্প চিন্তা করেছি।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণের প্রশ্ন সংস্কার কমিশনে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমরা ১০০টি আসন নারীর জন্য সংসদে বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছি। এখন যেটা ৫০। এবারের জন্য সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
জনসভা, সভা-সেমিনারে তাহলে কেন জামায়াতের কোনো নারী নেত্রীকে বক্তব্য দিতে দেখা যায় না কেন? উপস্থাপক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, দৃশ্যমান হয় না, এটা ঠিক না। ইতোমধ্যে কূটনৈতিক লাইনে জামায়াতে ইসলামীর নারী নেতৃত্ব প্রতিনিধিত্ব করছে। এ ছাড়া দেশি ও আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন।
বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে ভিশন আমরা নিয়েছি– একটি ইনসাফের বাংলাদেশ, একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার বাংলাদেশ আমরা করতে চাই। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্যে আমরা যে বাংলাদেশ চাই। অর্থনৈতিক মুক্তি, সুশাসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা– এই মিশন নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই।’
দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার ইচ্ছার কথা তুলে ধরে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘যে দুর্নীতি আজকের বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছে, সেটাকে ভাঙতে চাই। আমরা গড়তে চাই ইনসাফের বাংলাদেশ। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
‘আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়তে চাই যেখানে দুর্নীতি চিরবিদায় হবে। যেখানে দুর্বৃত্তায়ন বিদায় হবে, সন্ত্রাস বিদায় হবে। আইনশৃঙ্খলাকে আমরা নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে চাই। মায়ের কোলে যেমন শিশু নিরাপদ, বাংলাদেশের নাগরিক যেন, আগামী প্রজন্ম সেরকম নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে পারে।’
শিক্ষা খাত নিয়ে জামায়াতের এ নেতা বলেন, আমরা শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে চাই। শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা সর্বস্তরে অবৈতনিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রযুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর শিক্ষা দিয়ে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাই। গবেষণা ও শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আমাদের চিন্তা আছে।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, বর্তমানে জিডিপির ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে শিক্ষায়। সেটা আমরা পর্যায়ক্রমে ৬ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। কারিগরি শিক্ষাকে অবৈতনিক করব আমরা। দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে অবশ্যই শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈতিকতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মেধাগুলো পাচার হচ্ছে। এই মেধা পাচার রোধ করতে হলে দেশের ভেতরে সুযোগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের সন্তানরা বিদেশে গিয়ে অন্য রাষ্ট্রে অবদান রেখে এগিয়ে দিতে পারে। তাহলে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে?
অর্থনীতি প্রসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, অর্থনৈতিক বিবেচনায় আমাদের পদে পদে বাধা তৈরি করেছে দুর্নীতি। সেই জায়গায় আমরা যদি জিরো পয়েন্টে আসতে পারি তাহলে তা সম্ভব। এটার জন্য আমাদেরকে সব ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়াতে হবে।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, অনেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। রপ্তানিখাতে বস্ত্রশিল্প আমাদের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে। রপ্তানিখাতকে যদি আমরা বৈচিত্র্যময় ও বহুমুখীকরণ করতে পারি এবং কর দুর্নীতি দূর করতে পারি তাহলেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
‘বাণিজ্যবান্ধব অর্থনীতি ও ভারসাম্য তৈরি করতে পারলে আমরা প্রতি তিন বছর অন্তর করের ক্ষেত্রে রিলিফের ব্যবস্থা নিয়ে আসছি। তিন বছর পর তাদেরকে স্বীকৃতি, সম্মান, সুযোগ তৈরি করে দিয়ে ইনসেন্টিভ দেব। শতভাগ না অর্ধেক কর দিয়ে তিনি উৎসাহ বোধ করবেন। এভাবে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা হবে।’
তিনি বলেন, নারী শিক্ষার প্রসার ও নারীর অধিকারগুলো সমুন্নত করার ক্ষেত্রেও আমাদের ব্যাপক পরিকল্পনা আছে। মাতৃত্বকালীন রেশন, কৃষকদের জন্য নতুন কার্ড সিস্টেম, রেশন সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা আছে। মাছ আহরণ বন্ধের সময় মৎস্যজীবীদের যে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয় মাসে, সেটা আমরা তিন গুণ বাড়াব।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এভাবে কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিক এবং ছোট-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে আমরা দেশের অর্থনীতিকে জনগণের উপযোগী করে গড়ে তুলব। আমরা বেকারত্বকে শূন্যে নামিয়ে আনতে পরিকল্পনা নিয়েছি।
ভারত থেকে চাল আমদানির বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার