ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বিশ্ব ইজতেমায় সাদ-জুবায়েরপন্থী বিভাজন কেন? 

আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম

মুসলিম উম্মার তাবলিগ জামাতের বড় আয়োজন বিশ্ব ইজতেমা। হজের পর এটি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সবচেয়ে বড় সম্মেলন। প্রতিবছর গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বসা এ আয়োজন মুসলিম বিশ্বের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। কিন্তু হতাশার বিষয়, পবিত্র এ আয়োজনেও ঢুকে পড়েছে দ্বন্দ্ব-বিবাদ। যার এক পক্ষে রয়েছেন মাওলানা জুবায়েরপন্থী এবং অপর পক্ষে আছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা।

প্রতিবছর লাখ লাখ মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। আগে বিশ্ব ইজতেমা বসতো একধাপে। কিন্তু তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের কারণে গত কয়েক বছর ধরে ইজতেমা আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির বিরোধী পক্ষ মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি। চার দিন বিরতির পর সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা ইজতেমা করবেন আগামী ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি।

ইজতেমা আসলেই জুবায়ের ও সাদপন্থী মুসল্লিরা প্রায়ই একে-অপরের প্রতি মুখোমুখি অবস্থান নেন। পক্ষ দুটি যাতে বড় ধরনের ঝামেলায় না জড়ান সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও। এবারও দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে। 

ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্নী মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন তাবলিগ জামাতের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। তখন ঢাকায় তাদের মূল কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদে দুই পক্ষের কর্মীর মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরের বছর কাকরাইল মসজিদের দখল নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছিল দু’পক্ষের মধ্যে। তাবলিগের এই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে আছেন তাবলিগ জামাতেরই কেন্দ্রীয় নেতা ভারতের মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভি। মূলত কান্ধলভির কিছু বক্তব্য ভারতে তাবলিগ জামাতের একাংশকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। বিশেষ করে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ তার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে।

দারুল উলুম দেওবন্দ-এর সাদবিরোধী অবস্থান প্রকাশ্য হওয়ার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। বিভক্ত হয়ে পড়েন বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের শীর্ষ নেতারা। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তাবলিগ জামাতের সাদ বিরোধী অংশকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেন হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নেতা আহমদ শফী। বাংলাদেশে তখন থেকেই সাদ বিরোধী অংশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা জুবায়ের আহমদ। আর সাদপন্থীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম।

সাদ কান্ধলভি তাবলিগ জামাতে কিছু সংস্কারের প্রয়োজনের কথা বলে আসছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে। সেই সংস্কারের প্রস্তাব থেকেই ২০১৭ সালেই ভারতে তাবলিগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিভক্তির সূত্রপাত হয়। মাওলানা সাদের একটি বক্তব্য এমন ছিল- ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয়। অনেকেই মনে করেন যে এই বক্তব্যের মাধ্যমে মিলাদ বা ওয়াজ মাহফিলের মতো কর্মকাণ্ড পরিচালনার বিনিময়ে অর্থ নেওয়ার বিপক্ষে কথা বলেছেন মাওলানা সাদ।

এ ছাড়া সাদ কান্ধলভি ওই সময়ে আরও বলেছিলেন, মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ না পড়ে মসজিদে এসে পড়া উচিত, যাতে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে। এসব বক্তব্যে দারুল উলুম দেওবন্দ অনুসারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি করে। তাদের দাবি, সাদ কান্ধলভির কথাবার্তা আহলে সুন্নাত ওয়া'ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।

তবে সাদ কান্ধলভির সমর্থকদের দাবি, তাদের নেতার বক্তব্য বা সংস্কারের প্রস্তাব মানতে না পেরেই বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক চেহারা দেওয়া হয়েছে। তবে সাদ কান্ধলভির বিরোধীরা বলছেন, মাওলানা সাদ এখনো তার মতবাদ ছাড়েননি। তাই এটা যেন বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে এবং মুসলিমরা যেন পথভ্রষ্ট না হয়, সে জন্য তারা কাজ করে চলেছেন। অনেক চেষ্টা করেও দুই পক্ষকে এক করা যাচ্ছে না।

MB/FI/SA
আরও পড়ুন