ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

শিশুর বাম চোখের বদলে ডান চোখে অপারেশন, চিকিৎসকের বিচার দাবি

‘ভুলটা আসলে অন্যান্য স্টাফদের জন্য হয়েছে। বাচ্চাটিকে তারা অপারেশন টেবিলে যেভাবে তুলেছে, আমিও সেভাবে বসে গিয়েছি।’

আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম

রাজধানীর ধানমন্ডি আই হসপিটালের বিরুদ্ধে চিকিৎসকের ভুলে দেড় বছর বয়সি শিশু ইর্তিজা আরিজ হাসানের বাম চোখের বদলে ডান চোখে অপারেশনের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের চোখে পড়লে পরবর্তীতে দুঃখ প্রকাশ করে আবারও বাম চোখে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছে শিশুটির বাবা-মা।

বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন শিশুর চাচা মাহফুজ নাফি। পরে হাসপাতালটিতে খোঁজ নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

স্বজনদের অভিযোগ, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে পরিবারের সদস্যরা দেড় বছর বয়সী শিশু ইর্তিজা আরিজ হাসানের  চোখের সমস্যা নিয়ে আসেন ধানমন্ডি আই হসপিটালে। বাম চোখের মধ্যে ময়লা জাতীয় কোনো একটি জিনিসের অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন চিকিৎসক। পরে, অপারেশনের জন্য এনেসথেসিয়া দিয়ে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে নেয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর পরিবারের সদস্যরা দেখতে পান বাম চোখের জায়গায় অপারেশন করা হয়েছে ডান চোখে।

শিশুটির মা ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটারের বাইরে আমি আর আমার স্বামী অপেক্ষায় ছিলাম। বাবুকে যখন ওখান বের করলো, তখন জ্ঞান ফিরবে ফিরবে এমন ভাব ছিল। তার একটু পরে ওর বাবা কোলে নিয়ে বলতেছে, ওর তো ডান চোখে অপারেশন করে ফেলছে, কিন্তু বাম চোখ অপারেশন করার কথা ছিল।

এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে শিশুটির বাবা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আজকে আমাদের পরিবারের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে গেল। এটা যদি বড় কোনো ধরণের অপারেশন হত তাহলে আমরা হয়তো এখন মাত্র দেড় বয়সী রোগীকে নিয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দৌড়াদৌড়ি করতে হত। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক বলেন, ‘ভুলটা আসলে অন্যান্য স্টাফদের জন্য হয়েছে। বাচ্চাটিকে তারা অপারেশন টেবিলে যেভাবে তুলেছে, আমিও সেভাবে বসে গিয়েছি। তারপর চোখের পাতা উল্টাতেই দেখি একটা আইল্যাশ (পাপড়ি) আছে। যদি আমি ডান চোখে সেটি না পেতাম, তাহলে তো অবশ্যই বাম চোখ উল্টিয়ে দেখতাম। যেহেতু ওই চোখেও পেয়েছি তাই সেটি বের করে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশুটির দুটি চোখেই চুল পাওয়া গেছে। প্রথমে ডান চোখ থেকে চুল বের করে আনার পর রোগীর স্বজনরা বলছে যে বাম চোখে সমস্যা ছিল। তখন আমি আবার বাম চোখ পরিষ্কার করে দিয়েছি। এটি আমাদের কাছে খুবই ছোট একটি অপারেশন। তারপরও আমি ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে বলছি এটা আমার ভুল।’

অস্ত্রোপচারের সময় শরীরে সারাদিনের ক্লান্তি ছিল উল্লেখ করে অভিযুক্ত চিকিৎসক আরও বলেন, ‘আমি ওইদিন সকাল থেকেই কাজ করছিলাম। যে কারণে অপারেশন থিয়েটারে স্টাফরা যেভাবে বাচ্চাটিকে আমার সামনে দিয়েছে, আমিও সেভাবেই কাজ করে দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমার আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। এখন তো আসলে অন্য স্টাফদের দোষ দিয়েও লাভ নেই।’

বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটের অন্যতম পরিচালক অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে আমি বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু বিষয়টিকে যত বড় করা হয়েছে আসলে তেমনটি নয়। চোখের এই অপারেশনটি খুবই ছোট, যেখানে চোখের ভেতরে কোন কাঁটাছেড়ারও প্রয়োজন হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসলে (মঙ্গলবার) ওই শিশুর বড় কোনো অপারেশন হয়নি। শিশুর বাম চোখে চুলের মতো ময়লা পড়েছিল, সেটি আনতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেখেন যে ডান চোখেও ময়লা আছে, তারপর ডান চোখ পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিল। পরে আবার বাম চোখও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। এটি অবশ্যই ভুল বোঝাবুঝি। এটা কোনো অপারেশনই না। আমরা এটিকে অপারেশনের পর্যায়ে ফেলি না।’

চোখে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে একটি বোর্ড মিটিং করেছি। যদিও বিষয়টি খুবই ছোট, তারপরও আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।’

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, ‘ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ দায়ের করলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। অপরাধী যেই হোক না কেন অভিযোগ পেলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

Fj
আরও পড়ুন