হাজার হাজার মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত। তাদের বেশিরভাগই নারী।ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানায়।
এমনই একজন কুয়েতি নাগরিক লামা। সাপ্তাহিক শরীরচর্চার ক্লাস শেষে বাসায় ফিরতেই চমকে ওঠেন তিনি। হঠাৎ জানতে পারেন যে, সে আর কুয়েতের নাগরিক নন। মুহূর্তের মধ্যে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। কুয়েতে লামার মতো এমন হাজারো মানুষের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী।
এমন অভিযোগ তুলেছেন আরও এক পঞ্চাশোর্ধ্ব জর্দান বংশোদ্ভূত নারী। কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে নিজের পরিচয় গোপন রাখছেন শর্তে তিনি এএফপিকে বলেন, এটা ছিল এক ভয়ানক ধাক্কা। বিশ বছরের বেশি সময় ধরে আইন মেনে চলার পর একদিন হঠাৎ জানতে পারলাম আমি আর নাগরিক নই। এটা একদমই মেনে নেওয়ার মতো নয়।
কুয়েতে গণহারে নাগরিকত্ব বাতিলকে দেশটির নতুন আমির শেখ মিশাল আল-আহমদ আল-সাবাহর সংস্কারমূলক এজেন্ডার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতায় এসে পাঁচ মাসের মাথায় সংসদ বাতিল করেন শেখ মিশাল আল-আহমদ আল-সাবাহর। সেই সঙ্গে সংবিধানের কিছু অংশ স্থগিত করেন। বিশ্লেষকদের মতে, তার সর্বশেষ পদক্ষেপটি মূলত কুয়েতি পরিচয় পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। যার লক্ষ্য রক্তসূত্রে কুয়েতিদের নাগরিকত্ব সীমিত রাখা এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটার সংখ্যা হ্রাস করা।
ক্ষুদ্র ও তেলসমৃদ্ধ কুয়েতের জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ, যাদের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কুয়েতি। তাদের উদ্দেশ্যে মার্চ মাসে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে আমির জানান, তিনি কুয়েতকে ‘তার মূল মানুষদের হাতে তুলে দেবেন, যেখান থেকে সব অপবিত্রতা দূর হবে।
সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির পরিসংখ্যান বলছে, কুয়েতে গত আগস্ট থেকে নাগরিকত্ব হারানো মানুষের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ২৬ হাজার নারী। যদিও গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে। কুয়েত ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক বদর আল-সাইফ বলেন, এত বড় আকারে নাগরিকত্ব বাতিল কুয়েতের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
এছাড়া, এর আগে থেকেই কুয়েতে রয়েছে এক বিশাল রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠী— বিদুন। ব্রিটিশদের হাত থেকে ১৯৬১ সালে স্বাধীন হওয়ার সময় তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি।
এদিকে, সাম্প্রতিক অভিযানে বিয়ের মাধ্যমে পাওয়া নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, যা কেবল নারীদের জন্যই প্রযোজ্য। ১৯৮৭ সালের পর যেসব নারী এভাবে নাগরিকত্ব পেয়েছেন, সেগুলোও বাতিল করা হয়েছে। সরকারি তথ্য মতে, ১৯৯৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৮ হাজার ৫০৫ জন নারী বিয়ের মাধ্যমে কুয়েতের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন।
এছাড়া, কুয়েত সরকারের এ পদক্ষেপের আওতায় পড়েছেন দ্বৈত নাগরিকরা। যেসব মানুষ প্রতারণার মাধ্যমে, যেমন জাল কাগজপত্র দিয়ে নাগরিকত্ব নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেই এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে দেশটির সরকার। এমনকি অবদানের ভিত্তিতে যারা নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন, তাদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন কুয়েতি পপ গায়িকা নাওয়াল ও অভিনেতা দাউদ হুসেইন।
