ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

কোরবানির প্রচলন শুরু হয়েছিল যেভাবে

আপডেট : ০৭ জুন ২০২৫, ০১:২৯ পিএম
ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, নবী আদম (আ.) ও নবী ইব্রাহিমের (আ.) সময় থেকেই পশু কোরবানি দেওয়ার রীতি ছিল। মক্কাতেও প্রতি বছর কোরবানি দেওয়া হতো। তবে সেসময় মক্কার বাসিন্দার বিভিন্ন দেবদেবীর নামে পশু কোরবানি দিতেন। ফলে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) সেই সময় মক্কায় থাকলেও তিনি এই রীতি অনুসরণ করতেন না। নবুয়ত প্রাপ্তির প্রায় তের বছর পর নবী মুহাম্মদের (স.) মদিনায় হিজরত করলে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানি দেওয়ার রীতি চালু হয়।
 
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ বিভাগের উপ-পরিচালক মাওলানা মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী বলেন, ইসলামের অনেক বিধিবিধান রাসুল (সা.) মদিনায় আসার পর কার্যকর হয়েছে। কারণ তিনি ইসলাম প্রচার শুরু করার পর মক্কার মানুষের মধ্যে একাত্মবাদ প্রতিষ্ঠা ছিল প্রাথমিক কাজ। আর মদিনায় হিজরত করে আসার পর ইসলামের বিধিবিধান জারি হয়।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান মিয়াজী বলেন, হিজরি দ্বিতীয় সনে ঈদের প্রবর্তন করা হয়েছিল। আনাস নামে নবী মুহাম্মদের একজন সাহাবীর বর্ণনা করা এক হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, মদিনায় যাওয়ার পর নবী দেখলেন যে সেখানকার মানুষ বছরে দুইটি বড় উৎসব পালন করে। তিনি তখন জানতে চান, সেগুলো কী উৎসব? এগুলো ছিল নওরোজ এবং মিহিরজান নামে দুটি উৎসব - যেগুলো সেখানকার বাসিন্দাদের ধর্ম এবং গোত্রের রীতি অনুযায়ী একটি শরতে এবং আরেকটি বসন্তকালে উদযাপিত হত।
অধ্যাপক মিয়াজী বলেন, তখন ওই দুইটি উৎসবের আদলে মুসলমানদের জন্য বছরে দুইটি ধর্মীয়, সামাজিক এবং জাতীয় উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তন করা হয়। সেই দুই ঈদের একটি হজের সময় পালন করা হতো, যা ঈদুল আযহা নামে পরিচিত। তবে ইসলাম প্রচারের পর ঠিক কবে আর কীভাবে প্রথম কোরবানি দেওয়া হয়েছে সেই সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য পাওয়া যায় না।
 
কোন কোন ইতিহাসবিদ বলেন, মদিনায় আসার পর ইসলামের নবী প্রথম দুইটা দুম্বা নিজ হাতে কোরবানি দিয়েছেন। তখন তিনি বলেছিলেন, একটা আমার নিজের পক্ষ থেকে আরেকটা আমরা উম্মতের পক্ষ থেকে।
 
মাওলানা মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী বলেন, ইসলামের অনেক কিছুই আগের পয়গম্বরদের রীতি মেনে করা হয়েছে। যেমন প্রথম দিকে বায়তুল মোকাদ্দেসের দিকে সিজদা করা হলেও পরবর্তীতে ইব্রাহিম (আ.) এর আদর্শ অনুযায়ী কাবার দিকে সিজদা করা হয়। কোরবানির ব্যাপারটিও তেমনি এসেছে।
তিনি বলছেন, কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী, আদম (আ.) থেকে কোরবানি শুরু হয়েছে। তবে সুরা কাওসার ও সুরা হজে কোরবানি করার নির্দেশনা পাওয়া যায়। এই সুরা কাওসার নাজিল হয়েছিল হিজরতের আগেই, রাসুল (সা.) মক্কায় থাকার সময়। আর সুরা হজ মক্কা ও মদিনায় মিলিয়ে নাজিল হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই দুইটি সুরাতেই কোরবানি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, রাসুল (সা.) মক্কায় থাকার সময় থেকেই কোরবানির বিষয়টা এসেছে। তবে তিনি প্রথম কবে কোরবানি দিয়েছেন, সেই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
 
মাওলানা পাটোয়ারী জানান, তিরমিজি হাদিসে উল্লেখ আছে- আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেছেন, হিজরতের পরে রাসুল (সা.) ১০ বছর মদিনায় ছিলেন, ১০ বছরই কোরবানি করেছেন। আর আনাস ইবনে মালিক বলেছেন, রাসুল (সা.) দুইটা শিং ওয়ালা নাদুস-নুদুস দুম্বা জবাই করেছেন আর বলেছেন একটি আমার উম্মতের পক্ষ থেকে একটা আমার পক্ষ থেকে।
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই সময় কোরবানির বিষয়টি ছিল অনেকটাই হজ কেন্দ্রিক। যারা হজ বা ওমরাহ করতে যেতেন, তারা কোরবানির জন্য উট বা দুম্বার মতো পশু সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। এসব পশুকে বলা হতো হাদি।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান মিয়াজী বলেন, ষষ্ঠ হিজরিতে বা ৬২৮ খৃষ্টাব্দে যখন রাসুল (সা.) ওমরাহের উদ্দেশ্যে রওনা হন, তখন হুদাইবিয়ায় বাধা দেওয়া হলে তিনি তাবুতে অবস্থান করেন। হুদাইবিয়ার সন্ধি হলে তিনি সেই সময় নিজের ও পরিবারের জন্য উট কোরবানি দেন। এ সময় তিনি ৬৩টি উট কোরবানি দেন বলে জানা যায়। সেই সময় ইসলামের বিধিবিধানে উট, মহিষ, গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কোরবানি দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
 
এই বিষয়ে মাওলানা মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী বলেছেন, ষষ্ঠ হিজরিতে ওমরাহ করতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় পশুগুলোকে সাথে করে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম ছিল। তখন কোরবানি ছাড়া আরেকটা রীতি ছিল। পশুগুলোর সিনায় কেটে দাগ লাগিয়ে মক্কার দিকে ছেড়ে দেওয়া হতো, যাতে বোঝা যেতো যে এগুলো কোরবানির পশু। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর কিছু পশু কোরবানি দেওয়া হয়, আর কিছু পশুকে সিনায় দাগ লাগিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
 
মাওলানা পাটোয়ারি বলছেন, দশম হিজরিতে রাসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের পর সেই বছর তিনি নিজে আনুষ্ঠানিকভাবে হজ করেন এবং কোরবানি দেন। এর আগের বছর সাহাবী আবুবকর সিদ্দিকির (রা.) নেতৃত্বে একটি দলকে হজের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেই দলের সঙ্গেও কোরবানির জন্য হাদি বা পশু ছিল। সূত্র: বিবিসি
SN
আরও পড়ুন