১২০ টাকায় স্বপ্ন পূরণ ঝিনাইদহের ২৫ যুবক-যুবতীর

আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম

তুষার আহমেদের বাবা মারা যান ২০১৮ সালে। পরে মাও অন্যের সাথে চলে যান। বাবা মারা যাওয়ায় সংসারের দায়িত্ব কাঁধে পড়ে তার। ভালো কোনো কাজ না পাওয়ায় শুরু করেন কৃষিকাজ। অন্যের জমিতে কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসার। সামান্য এই আয় দিয়েই ২ ভাই আর দাদীর সমস্ত খরচসহ নিজের পড়ালেখার খরচ চালান তিনি।

পাশাপাশি চেষ্টা করতে থাকেন পুলিশের চাকরি পাওয়ার। কয়েকবার চেষ্টার পর তার সেই কষ্ট সফল হয়েছে। মাত্র ১২০ টাকায় ফরম পূরণ করে চাকরি পেয়েছেন তুষার। তিনি ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামের মৃত আকরাম হোসেনের ছেলে। সামনের দিনগুলো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালোভাবে কাটানোর আশা তুষারের।

শুধু তুষারই নয়, একই সাথে চাকরি পেয়েছেন ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলার আরো ২৫ যুবক-যুবতী। গত রোববার রাতে ঝিনাইদহ পুলিশ লাইন্স ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদের এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। কোনো প্রকার ঘুষ, তদবির কিংবা অনিয়ম ছাড়াই চাকরি পাওয়ায় অনেকেই আবেগে কেঁদে ফেলেছেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের মুখে এখন আশার আলো, কণ্ঠে কৃতজ্ঞতার কথা।

একসময় পুলিশের চাকরি ছিল অন্যসব সরকারি চাকরির মতো কিছু তরুণের কাছে সোনার হরিণ, যা পরিচিত ছিল ঘুষ বাণিজ্য নামেই। লাখ লাখ টাকা খরচ করা ছাড়া এটি পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। সেই সময়কে পেছনে ফেলে আজ শুধু ১২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এই মর্যাদাপূর্ণ চাকরি। মাঝখানে নেই কোনো ঘুষের কারবার।

জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এবারে কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য চলতি প্রক্রিয়ায় মোট আবেদন করেন ১৮৮০ জন। জুলাইয়ের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ লিখিত, শারিরিক ও মৌখিক পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ২৭৯ জন।

লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন ৩৪ জন। পরবর্তীতে মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে ২৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যার মধ্যে একজন নারী। পাশাপাশি অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে আরও ৫ জনকে।

নতুন চাকরি পাওয়া সদস্যরা জানান, ঘুষ, তদবির কিংবা অনিয়ম ছাড়াই চাকরি পাওয়ায় আবেগ আপ্লুত আমরা সবাই। আনন্দে যেন কথা বলাও ভুলে গেছেন তারা।

ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, শারীরিক সক্ষমতা, মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রার্থীরা যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সততা, নিষ্ঠা ও মানবিকতা নিয়ে কাজ করা, সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের আস্থা অর্জন এবং বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান পুলিশ কর্মকর্তাদের। 

NJ