ইসলামের দৃষ্টিতে জনসম্পদকে আমানত হিসেবে দেখা হয়, জনসম্পদের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং এর অপব্যবহার থেকে বিরত থাকা ইমানের অপরিহার্য অংশ। অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা কবিরা গুনাহ বা বড় ধরনের অপরাধ। আত্মসাৎকারী ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম করা হয়েছে। এমন ব্যক্তি অপরাধের শাস্তি না পেয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে না।
এ মর্মে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে : মাকিল ইবনু ইয়াসার (রা.) বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কোনো ব্যক্তি মুসলিমের দায়িত্ব গ্রহণের পর খিয়ানত অবস্থায় মারা গেলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৭১৫১
আর দেশের সম্পদ আত্মসাৎ করা আরও জঘন্য পাপ। কেননা, দেশের সম্পদের মধ্যে দেশের সব মানুষের হক আছে। তাই রাষ্ট্রীয় সম্পদ গ্রাস করা দেশের সব মানুষের হক মেরে দেওয়ার নামান্তর।
আর পরকালে এমন আত্মসাৎকারীর পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ। যে যা আত্মসাৎ করবে, তা-ই নিয়ে কিয়ামতের ময়দানে উপস্থিত হতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো নবীর জন্য শোভনীয় নয় যে তিনি খিয়ানত করবেন। আর যে ব্যক্তি খিয়ানত করবে সে কিয়ামতের দিন সেই খিয়ানত করা বস্তু নিয়ে উপস্থিত হবে।
অতঃপর প্রত্যেকেই পরিপূর্ণভাবে পাবে যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৬১)
রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যয় ও অসদ্ব্যবহার ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে না।
পরকালে এমন ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কিছু মানুষ আল্লাহর দেওয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১১৮)
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) কসম করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই (রাষ্ট্রীয়) সম্পদে কেউ কারো চেয়ে বেশি হকদার নয়। আমিও কারো চেয়ে বেশি হকদার নই। এই সম্পদে সব মুসলমানের অধিকার আছে, তবে মালিকানাধীন দাস ছাড়া।’ (আল ফাতহুর রব্বানি, পৃষ্ঠা : ৮৭)
রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যয়ে দক্ষ ও সৎ প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোনো ব্যক্তি তার সামাজিক বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোনো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করলে তা ইসলামী আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে। কেননা, এর ফলে রাষ্ট্র যেমন যোগ্য কর্মী ও প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে, তেমনি একজন যোগ্য ব্যক্তি তার প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এ ক্ষেত্রে নবীযুগের একটি ঘটনা দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা যেতে পারে।
আত্মসাৎ, খিয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতা ভয়ংকর অপরাধ। যারা দুনিয়ায় এগুলোর সঙ্গে জড়িত হবে, তাদের হাশরের ময়দানে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
যারা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে, তাদের বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ংকর। জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করা থেকে সাবধান! সামান্য সুখ যেন আজীবনের কান্নায় রূপ না নেয়!
পরকালে এই সম্পদের ‘পাই টু পাই’ হিসাব দিতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবিজী বলেন ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সেদিন আসার আগে, যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তা তার কাছ থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯)
