ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

আটলান্টিকে ছয় ঘণ্টা সাঁতরেও বেঁচে ফেরেন জেলে

আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম

এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হিমশীতল আটলান্টিক মহাসাগরে ছয় ঘণ্টা সাঁতরে প্রাণে বেঁচে যান আইসল্যান্ডের এক তরুণ জেলে, গুডলগুর ফ্রিডথোরসন। ১৯৮৪ সালের ১২ মার্চ রাতে হেইমায়ের উপকূল থেকে তিন মাইল দূরে সমুদ্রে তার মাছ ধরার নৌকা ডুবে গেলে এই অলৌকিক ঘটনা ঘটে।

মাত্র ২৩ বছর বয়সে, ফ্রিডথোরসন তার মাছ ধরার ট্রলার ‘হেলিসেই ভিই ৫০৩’-তে কাজ করছিলেন। রাত ১০টার দিকে জাহাজটির ট্রল জাল সমুদ্রতলে আটকে গেলে মুহূর্তের মধ্যেই তা ডুবে যায়। ক্রুরা কোনো বিপদ সংকেত পাঠানোর সুযোগও পায়নি। জাহাজের অন্য পাঁচজন সঙ্গী মারা গেলেও, ফ্রিডথোরসন প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে একাই সাঁতরে তীরে পৌঁছান।

তীব্র ঠান্ডার মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকে, সাধারণত মানুষ হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে। কিন্তু গবেষকরা পরে জানান, প্রায় ৬°C তাপমাত্রার জলে ছয় ঘণ্টা সাঁতার কাটলেও ফ্রিডথোরসনের দেহে হাইপোথার্মিয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বরং তিনি স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বজায় রাখতে পেরেছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং মানব সহনশীলতার এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ।

পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজির অধ্যাপক মাইক টিপটনের মতে, তার শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা, পেশী সক্রিয় রাখা এবং শরীরে পুরু চর্বি থাকা এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। তার শরীরের চর্বি তাকে উষ্ণ রাখে এবং শক্তি সরবরাহ করে।

দুর্ঘটনার পর তিনি উপকূলরেখা বরাবর ক্লান্ত দেহে হাঁটতে হাঁটতে একটি গ্রামে পৌঁছান এবং স্থানীয় এক বাসিন্দার দরজায় কড়া নাড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অল্প কিছু চিকিৎসার পরই ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

বর্তমানে ফ্রিডথোরসনের বয়স ৫৮। তিনি এই ঘটনার মাধ্যমে মিডিয়ায় প্রচারের আলোয় আসলেও, কখনোই এই গল্পকে নিজের জনপ্রিয়তা বা অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে ব্যবহার করেননি। তার সেই রাতে পরা ভেজা পোশাক এখন হেইমায়ের এল্ডহেইমার জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে যেখানে এটি নিছক একটি ঐতিহাসিক নিদর্শনের চেয়েও অনেক বেশি।

DR/AHA
আরও পড়ুন