ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

লক্ষ্মীপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংকটে ধুঁকছে সরকারি বিদ্যালয়

আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১৭ পিএম
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংকট চললেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে মাত্র একজন শিক্ষক ৭ জন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন, সেটিও আবার কোচিং ক্লাস। ওইদিন অন্য কোনো শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন না।
 
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, অন্য ২ জন শিক্ষক সদর উপজেলা পরিষদে নবাগত শিক্ষকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গেছেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটির সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল বিকেল ৩টায়।
 
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩ জন। প্রধান শিক্ষকসহ আরও ২টি সহকারী শিক্ষক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৫৪ জন। তবে প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থাকেন সর্বোচ্চ ১৫-২০ জন।
 
পাশের একটি নূরানী মাদ্রাসায় যেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩ শতাধিক, সেখানে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়েও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না আসা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল।
 
 
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন প্রথম শ্রেণিতে ২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৬ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৪ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৪ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে আসে। শিক্ষক উপস্থিতির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা- কখনও একজন, কখনও দুই জন শিক্ষক থাকেন, বাকি সময় ফাঁকা থাকে ক্লাসরুম।
 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একসময় বিদ্যালয়টি ছিল জমজমাট। কিন্তু বিদায়ী প্রধান শিক্ষকের অবহেলা ও পড়াশোনার মানের অবনতির কারণে শিক্ষার্থী সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করে। বর্তমানে মাত্র ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আর ৩ জন শিক্ষক নিয়ে কোনোমতে টিকে আছে বিদ্যালয়টি।
 
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর নূর বলেন, আমি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যোগদান করি। এখানে মোট ৬টি শিক্ষক পদ থাকলেও ৩টি শূন্য রয়েছে। এক শিক্ষিকা নিয়োগ পেয়েও যোগদান করেননি। বর্তমানে আমাদের ৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে উপস্থিতি অনেক কম। আমি একাই ২/৩টি ক্লাস নিয়েছি। শিক্ষার্থী ভর্তি বাড়ানোর জন্য আমরা মা সমাবেশ, সচেতনতামূলক মিটিং এবং হোম ভিজিট করার পরিকল্পনা করছি। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে কোচিং করানো হয়, তবে এর জন্য কোনো ফি নেওয়া হয় না।
শিক্ষক সংকট, শিক্ষার্থীর কম উপস্থিতি ও তদারকির অভাব- সব মিলিয়ে পশ্চিম শেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ধুঁকতে থাকা এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
 
স্থানীয়দের দাবি, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শুধু গানের শিক্ষক নয়, বরং ধর্মীয় শিক্ষকেরও নিয়োগ দেওয়া উচিত। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে।
 
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনির হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে, তবে তা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
NJ
আরও পড়ুন