ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

তিস্তা প্রকল্প: বছরে জ্বালানি সাশ্রয় হবে ২০০ কোটি টাকা

আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম

দেশের বৃহতম তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার দুন্দিবাড়ী থেকে কিশোরগঞ্জ উপজেলার রাজিব পর্যন্ত উভয় ডাইক পুনর্বাসন ও শক্তিশালীকরণ কাজের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

অবশিষ্ট কাজ শেষ হলে উভয় ডাইকের আকস্মিক ভাঙ্গন প্রতিরোধে ও সেচ কাজের সুফল ভোগীদের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটানোয় এই প্রকল্প অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি প্রতিবছর অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া প্রায় ২০০ কোটি টাকার জ্বালানি ও রাসয়ানিক সার সাশ্রয় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান।

তিনি জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুর্নবাসন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের প্রধান সেচ খালের নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার দুন্দিবাড়ী নামকস্থান থেকে কিশোরগঞ্জ উপজেলার রাজিব পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৯১০ কিলোমিটার উভয় ডাইক শক্তিশালীকরণ কাজে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ টাকা।

এ প্রকল্পের কার্যাদেশ প্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চুক্তি হয়েছে ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার টাকার। প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে আগামী ২০২৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এ প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ৫ শতাংশ কাজ শেষ হলে প্রতিবছর উভয় ডাইকের কমান্ড এলাকার ২৫ হেক্টর জমির সেচ সুবিধাভোগী কৃষকরা প্রতিবছর খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে অতিরিক্ত ১ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন করে ঘরে তুলবে। এছাড়াও ফসল উৎপাদনে জ্বালানি তেল ও রাসয়ানিক সার খরচে সাশ্রয় হবে ২০০ কোটি টাকা। 

এ প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জুলফিকার রহমান জানান, দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পটি উত্তর জনপদের মানুষের বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। প্রকল্পটি সূচনালগ্ন থেকে খাদ্যাভাব ও অনাবৃষ্টি মোকাবেলায় কৃষি সেক্টরে সেচ সুবিধা প্রদান করে আসছে।

কৃষি সেক্টরের উপকারভোগীরা স্বল্প খরচে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে অভাব-অনাটনের ধকল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এ ধারাবাহিকতায় তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ১৭ দশমিক ৯১০ কিলোমিটারের উভয় ডাইকটি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মেরামত না হওয়ায় পানি প্রবাহের প্রবল চাপ নিয়ন্ত্রণের ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে উভয় ডাইক নাজুক হয়ে পড়ে।

এর ফলে এ খালের বিভিন্নস্থানে লিকেজ হয়ে ডাইক বিধ্বস্ত হয়ে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তালিয়ে নষ্ট হয়ে যেত। এছাড়া সেচনির্ভর ফসল উৎপাদনে কৃষকরা প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়ায় পানির চাহিদা পূরণে বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত পাম্প বসিয়ে ফসল উৎপাদন করে ঘরে তুলে বাজারজাত করে লোকসান গুনতো।

তিস্তা ব্যারেজ সেচ খালের ডাইক ভাঙ্গন প্রতিরোধে শক্তিশালীকরণ, কৃষকদের পানির চাহিদা পূরণ ও অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রকল্পটি অুমোদনের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে সেচ খালের ভাঙ্গন রোধ হবে, সুফলভোগীরা পর্যাপ্ত পানি পাবে ও স্বল্প খরচে ফসল উৎপাদন করে লাভবান হবে।  

প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে গেলে জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী গ্রামের সুফলভোগী কৃষক আফজাল হোসেন ও অব্দুল গফুর জানান, তিস্তা সেচ খালের জলঢাকার দুন্দিবাড়ী থেকে রজিব পর্যন্ত উভয় ডাইক শক্তিশালীকরণে মাটি ভরাট কাজ ভাল হয়েছে। চাষাবাদে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কামাল হোসেন ও নজমুল হোসেন জানান, তিস্তা ব্যারেজের প্রধান খালে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কার ও মেরামতের অভাবে খালের উভয় ডাইকের কোনো কোনো জায়গায় ফাটল দিয়ে পানি যেতে যেতে ভেঙ্গে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচেতলিয়ে নষ্ট হতো। চলমান কাজটি যেভাবে শক্তিশালী করা হচ্ছে, তাতে ২০-৩০ বছরও উভয় ডাইক ভাঙ্গবে না।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার রাজিব এলাকার ওমর ফারুক জানান, সেচ খালের উভয় ডাইকে ঠিকাদাররা দুর-দূরাস্ত থেকে শত শত ট্রলি মাটি এনে আগের চেয়ে দ্বিগুণ চওড়া করে মাটি ভরাট করছে। এতে হালকা যানবাহন ও পথচারীদের যাতায়াত ব্যবস্থায় ভূমিকা রাখবে প্রকল্পটি।

NJ
আরও পড়ুন