ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

কোরআন-হাদিসের আলোকে শহীদ কারা

আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫০ এএম

মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ লাভ করবে। এড়িয়ে যাওয়া কারও সাধ্যে নেই। আর মৃত্যুর মধ্যে সর্বোত্তম ও সম্মানজনক মৃত্যু হলো শহীদি মৃত্যু। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাহাদাত কামনা করেছেন।

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে শহীদি মৃত্যু সম্পর্কে বলেন,
 
অর্থ: আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না, বরং তারা তাদের রবের কাছে জীবিত। তাদেরকে রিজিক দেয়া হয়।


 
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) উপরোক্ত আয়াত সম্পর্কে বলেন, আমরা এ আয়াত সম্পর্কে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, শহীদদের আত্মাকে সবুজ পাখির পেটে রাখা হয়। আরশের সঙ্গে লটকানো ঝাড়বাতির সঙ্গে যেগুলো অবস্থিত। 
 
জান্নাতের যেখানে ইচ্ছে তারা সেখানে বিচরণ করতে পারে। তাদের প্রভু তাদের দিকে একবার তাকিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি কিছু চাও? তারা বলল, আমাদের আর কি চাহিদা থাকতে পারে? আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছে সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারি? এভাবে তিনবার তিনি তাদের তা জিজ্ঞাসা করলেন। এরপর যখন শহীদগণ বুঝতে পারল যে, তাদেরকে চাইতেই হবে, তখন তারা বলল, হে রব! আমরা চাই আমাদের আত্মাকে আমাদের দেহে ফিরিয়ে দেয়া হোক যাতে আমরা আবার আপনার রাস্তায় শহীদ হতে পারি। তারপর আল্লাহ যখন দেখলেন যে, তাদের এর দরকার নেই তখন তাদের এভাবেই ছেড়ে দিলেন। (মুসলিম: ১৮৮৭)
 
শহীদ কারা?
 
অমুসলিমদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে নিহত ব্যক্তিকেই শহীদ মনে করা হয়। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত ব্যক্তি ছাড়া আরও অনেক মৃত ব্যক্তিকে শহীদি মর্যাদা লাভের সুসংবাদ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি এমন সব মৃত ব্যক্তিকেও শহীদ হিসেবে গণ্য করেছেন, যাদের মৃত্যুকে সাধারণত অপমৃত্যু মনে করা হয় (নাউজুবিল্লাহ)। অবশ্য সশস্ত্র যুদ্ধে নিহত শহীদ আর অন্যান্য শহীদের মধ্যে মর্যাদার তারতম্য থাকবে।
  
হাকিকি বা প্রকৃত শহীদ হওয়ার শর্ত
 
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানো ও কাফন দেয়ার দিক বিবেচনায় শহীদ দুই প্রকার। ১. হাকিকি বা প্রকৃত শহীদ। যিনি দুনিয়া-আখেরাত উভয় বিচারে শহীদ। তাকে গোসল করানো হয় না। কাফন দেয়া হয় না। বরং যে কাপড়ে সে শহীদ হয়েছে, সে কাপড়েই জানাজা পড়ে দাফন করা হয়।
 
২. হুকমি বা বিধানগত শহীদ। যিনি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুসংবাদ মুতাবেক পরকালে শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন। কিন্তু পৃথিবীতে তার ওপর প্রথম প্রকার শহীদের বিধান জারি হবে না। অর্থাৎ, সাধারণ মৃত ব্যক্তির মতো তাকেও গোসল-কাফন ইত্যাদি দেয়া হবে।
 
নিচের শর্ত পাওয়া গেলে তাকে হাকিকি বা প্রকৃত শহীদ গণ্য করা হবে:
 
(ক) মুসলমান হওয়া (খ) প্রাপ্ত বয়স্ক ও বোধসম্পন্ন হওয়া (গ) গোসল ফরজ হয়, এমন নাপাকি থেকে পবিত্র হওয়া (ঘ) বেকসুর নিহত হওয়া (ঙ) মুসলমান বা জিম্মির হাতে নিহত হলে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হওয়াও শর্ত। আর যুদ্ধ কবলিত এলাকায় কাফিরের হাতে অথবা ইসলামি খিলাফতের বিদ্রোহী ডাকাতের হাতে নিহত হলে ধারালো অস্ত্রের আঘাত শর্ত নয়। 
 
(চ) এমনভাবে নিহত হওয়া যার শাস্তি স্বরূপ প্রাথমিক পর্যায়েই হত্যাকারীর উপর কিসাসের বিধান আরোপিত হয়। (ছ) আহত হওয়ার পর কোনো রূপ চিকিৎসা ও জীবন ধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়াদি যেমন খানাপিনা ঘুমানো ইত্যাদির সুযোগ না পাওয়া। হুঁশ অবস্থায় তার ওপর এক ওয়াক্ত নামাজের সময় অতিবাহিত না হওয়া। পদদলিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে হুঁশ অবস্থায় লড়াইয়ের ময়দান থেকে তাকে উঠিয়ে না আনা।
 
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে মুসলমান আল্লাহর কালেমাকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে লড়াই করবে, কেবল সেই-ই আল্লাহর পথে লড়াই করলো। (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত: ৩৮১৪)

অতএব যারা তওহিদের কালেমাকে সমুন্নত করার নিয়তে আল্লাহর পথে লড়াই করে মারা যাবে, তারাই হচ্ছে প্রকৃত শহীদ। আর শহীদের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য হবে এই যে, সে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে লড়াই করবে না, তাকে বাহাদুর বলা হবে এ উদ্দেশ্যে বা লোককে শুনানোর উদ্দেশ্যে লড়াই করবে না। (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত:৫৩১৬; মুসলিম, মিশকাত: ২০৫)

HN
আরও পড়ুন