বর্তমান ডিজিটাল যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে ডিপফেক। এআই ব্যবহারে তৈরি এমন ছবি ও ভিডিও যেগুলো সত্যি মনে হয়, অথচ বাস্তব নয় তাই ডিপফেক। শব্দটির উৎপত্তি ‘ডিপ লার্নিং’ ও ‘ফেইক’ এর সংমিশ্রণে।
২০১৭ সাল থেকে প্রযুক্তিগত প্রতারণার এই ধারা শুরু হলেও, এখন এটি এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। হলিউড তারকা টম ক্রুজ, বলিউড অভিনেত্রী রশ্মিকা মান্দানা কিংবা ক্যাটরিনা কাইফ ডিপফেক থেকে রেহাই পাননি কেউই। এবার সাধারণ মানুষও শিকার হচ্ছেন এই প্রতারণার। একটি ভুল ভিডিও বা ছবি সামাজিকভাবে কারও সম্মানহানির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু টাকা হারানো নয়, ডিপফেক প্রযুক্তি মানুষের সম্মান, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে।
ডিপফেক ভিডিও তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় জেনারেটিভ অ্যাডভারসারিয়াল নেটওয়ার্ক (GAN) প্রযুক্তি। এখানে দুটি মেশিন লার্নিং মডেল একসঙ্গে কাজ করে একটি ভুয়া কনটেন্ট তৈরি করে, অন্যটি সেটি সত্যি মনে হচ্ছে কি না তা যাচাই করে। এই কারণে ডিপফেক ভিডিও এতটাই নিখুঁত হয় যে, তা ফটোশপ করা ছবিকেও হার মানায়।
কীভাবে বুঝবেন ডিপফেক
ডিপফেক চিহ্নিত করা কঠিন হলেও কিছু সূক্ষ্ম লক্ষণ দেখলেই বোঝা সম্ভব যে ভিডিওটি সত্যি নয়। নিচে ডিপফেক শনাক্ত করার ৫টি কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো-
চোখের পলক ফেলার ধরন খেয়াল করুন
ডিপফেক ভিডিওতে চোখের স্বাভাবিক ‘ব্লিঙ্ক’ বা পলক ফেলার গতি প্রাকৃতিক হয় না। এটি ২০১৮ সালের এক গবেষণাতেও প্রমাণিত। ভিডিওতে চরিত্র বারবার পলক ফেলছে না কিংবা চোখ অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে—এটি ডিপফেকের একটি বড় লক্ষণ।
ঠোঁটের নড়াচড়া খেয়াল করুন
লিপ-সিঙ্কিং ঠিকমতো হচ্ছে না? তাহলে সাবধান। সাউন্ড ও ঠোঁটের মুভমেন্টের মাঝে মিল না থাকলে বুঝে নিতে হবে এটি ডিপফেক ভিডিও হতে পারে।
ত্বকের গুণগত মান
ডিপফেক ভিডিওতে মুখের ত্বক অসম্ভব নিখুঁত দেখায়। কোনও দাগ, ব্রণ বা বাস্তবত্ব নেই। ত্বকের এই অস্বাভাবিকতা দেখে অনেক সময় ভিডিওর ভুয়া হওয়া শনাক্ত করা যায়।
চুল ও দাঁত
উচ্চমানের সফটওয়্যারেও চরিত্রের চুল ও দাঁত নিখুঁতভাবে রেন্ডার করা কঠিন। অনেক সময় এগুলো ভিডিওতে ঝাপসা বা অস্বাভাবিক দেখায় যা ডিপফেক চিনতে সাহায্য করে।
গয়নার আলো প্রতিফলন খেয়াল করুন
ডিপফেক ভিডিওতে ব্যবহৃত গয়নাগুলোতে আলোর প্রতিফলন অনেক সময় অস্বাভাবিক হয়। এটি বাস্তব ভিডিও থেকে আলাদা করা সহজ করে তোলে।
ডিপফেক ভিডিও সাধারণত খুব দীর্ঘ হয় না। কারণ, ফ্রেম বাই ফ্রেম এডিট করা সময়সাপেক্ষ ও জটিল। তাছাড়া ক্লোজ-আপ শট থেকেও প্রতারকরা এড়িয়ে চলে, কারণ সেখানে চেহারার অভিব্যক্তি নিখুঁতভাবে নকল করা খুব কঠিন।
বর্তমানে এমন অনেক সফটওয়্যার ও টুলস রয়েছে যা মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে ডিপফেক শনাক্ত করতে পারে। মানুষের চোখে যেসব সূক্ষ্ম অসঙ্গতি ধরা পড়ে না, সেই সংকেতগুলো বিশ্লেষণ করে ডিপফেক প্রমাণ করে এসব টুলস।
ডিপফেক শুধু বিভ্রান্তিকর নয়, অনেক সময় তা ভয়াবহ সামাজিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। নির্দোষ মানুষের সম্মানহানি, মিথ্যা প্রচার, এমনকি আইনি জটিলতায় জড়ানোর আশঙ্কাও তৈরি হয়।
ইনস্টাগ্রামে কিশোর-কিশোরীরা যেসব কন্টেন্ট বেশি দেখে
নতুন ফোনে চার্জ দ্রুত শেষ? জেনে নিন সমাধান
নতুন সংকটে উইকিপিডিয়া, কমছে ট্রাফিক