ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ইউরোপ পাড়ির স্বপ্ন ডুবল ভূমধ্যসাগরে

ছয় দিনেও সন্ধান মেলেনি হাছানের 

আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৫ এএম

নিয়মিত মৃত্যু বা নিখোঁজের ঘটনাও অনেকের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি থামাতে পারছে না।  নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর তরুণ মো. হাছান (২৩) তার লক্ষ্য ছিল ইউরোপে পাড়ি জমানো, বিশেষ করে ইতালিতে পৌঁছে একটি স্বচ্ছল ভবিষ্যৎ গড়া। কিন্তু সেই স্বপ্নের যাত্রা রূপ নিল মর্মান্তিক এক দুঃস্বপ্নে।

ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে দেড় বছর আগে লিবিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিল। লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি মানবপাচারকারী ট্রলার ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর থেকে ছয় দিন ধরে নিখোঁজ হাছান। এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি তার। ছেলের বেঁচে থাকার একটিমাত্র আশায় চোখের পানি ফেলছেন বাবা-মা। পাগলপ্রায় হয়ে ছেলের ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তারা।

হাছান নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নের রশিদপুর গ্রামের আমিন উল্যাহ ও মমতাজ বেগম দম্পতির ছোট ছেলে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে হাছান ছিল সবার ছোট। পরিবারের অভাব ঘোচাতে ও ভালো জীবন গড়তে তিনি বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

জানা গেছে, দেড় বছর আগে হাছান লিবিয়ায় পৌঁছান। সেখান থেকে নিয়মিত পরিবারকে টাকা পাঠাতেন। গত বুধবার (২ জুলাই) রাতে পরিবারের সবার কাছে দোয়া চেয়ে ফোন করেন তিনি। তারপর ট্রলারে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা জানান। কিন্তু পাঁচ দিন ধরে তার কোনো খোঁজ নেই।

হাছানের মা রহিমা আক্তার বলেন, আমি ড. ইউনূস স্যারের হস্তক্ষেপ চাই। আমার ছেলের কথা আমি ছয়দিন শুনি না। আমি কাঁদতে কাঁদতে পাথর হয়ে গেছি। আমার চোখে রক্ত জমে গেছে। আমার ছেলে কোথায়? আল্লাহ আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও।

হাছানের বাবা আমিন উল্যাহ বলেন, শুনেছি ৬০ জন মানুষ নিয়ে ট্রলারটি ভূমধ্যসাগরে পাড়ি দিতে যায়। অনেকে উদ্ধার হয়েছে আবার অনেকে নিখোঁজ আছে। হাছানের নিখোঁজের খবরে বাড়িতে শোকের মাতম বইছে। আমার ছেলে কই আছে, বাঁচলো না মরল, কিছুই জানি না।

হাছানের দুলাভাই মো. বাবলু বলেন, ইতালি যাওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা কিস্তিতে নিয়ে তাকে পাঠিয়েছে তার বাবা-মা। সন্তানের নিখোঁজের ঘটনায় পুরো বাড়িতে শোকের ছায়া। এলাকায় মসজিদে মাদরাসায় তার জন্য দোয়া হচ্ছে। হাছানের পরিবার স্থানীয় প্রশাসন ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। তারা চায়, যেভাবেই হোক, নিখোঁজ হাছানসহ অন্যদের বিষয়ে সঠিক তথ্য জানানো হোক এবং উদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক।

নোয়াখালী জেলা ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহকারী পরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, হাছানের পরিবার তার সন্ধান চেয়ে আমাদের কাছে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। গত কয়েক বছরে লিবিয়া হয়ে অবৈধ পথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে বহু বাংলাদেশি তরুণ প্রাণ হারিয়েছেন ভূমধ্যসাগরে। দালালচক্রের প্রতারণা, ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা এবং সঠিক তদারকির অভাব এই মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘতর করেছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। সমাজের প্রতিটি স্তরে মানবপাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা সময়ের দাবি।

AHA
আরও পড়ুন