ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে ঈদের দিন যাত্রা বিল্লালের, সদরঘাটে শেষ পুরো পরিবার

আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৫ এএম

ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে পন্টুনে থাকা ৫ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে একই পরিবারের ছিলেন ৩ জন। ওই তিনজন হলেন মো. বিল্লাল হোসেন (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৬) ও তাদের শিশু মাইসা (৩)। বিল্লাল বাবাকে হারিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। বেঁচে আছেন কেবল মা আলেয়া বেগম। মা থাকেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। ঈদের সময় ছুটি পেয়ে বিল্লাল প্রতিবার ঈদ করতে ছুটে যান মায়ের কাছে।

সপরিবারে নিহত মুক্তা বেগম সাড়ে ৬ থেকে ৭ মাসের গর্ভবতী ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার আত্মীয়রা। তারা বলছেন, বিল্লাল পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল ছিলেন। তার বাবা নেই। পোশাক কারখানার স্বল্প বেতনের কর্মী ছিলেন বিল্লাল। বেলাল-মুক্তা দম্পতির সংগ্রামী জীবনে স্বাবলম্বী হতে চাকরির পাশাপাশি স্ত্রীকে নিয়ে ব্যবসাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ায় ব্যবসা আপাতত বন্ধ রেখে স্ত্রীকে গ্রামে রেখে আসতে চেয়েছিলেন বেলাল। তাই ভিড় এড়িয়ে রওয়ানা করেছিলেন ঈদের দিন।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলের দিকে এমভি তাশরিফ-৪ দড়ি দিয়ে সদরঘাট পন্টুনে বাঁধা ছিল। এ সময় এমভি ফারহান-৬ লঞ্চটি পার্কিং করার জন্য ওই দুই লঞ্চের মাঝখান দিয়ে ঢুকলে ধাক্কা লেগে এমভি তাশরিফ-৪ লঞ্চটির বেঁধে রাখার দড়ি ছিঁড়ে যায়। এতে পন্টুনে থাকা পাঁচ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে কথা হয় বিল্লালের ভায়রা জহিরুল ইসলাম রাজুর সঙ্গে।

রাজু বলেন, বিল্লাল গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। গার্মেন্টসের টাইম কিপিং বিভাগে কাজ করতেন। ১৪-১৫ হাজার টাকার মতো বেতন পেতেন। সাড়ে ৪ হাজার টাকার বাসায় থাকা বিল্লালের জীবনটা সংগ্রামের ছিল। মেয়ে মাইশাকে এখনো স্কুলে ভর্তি করাননি। একটা মেয়ে বলে মেয়েটাকে অনেক আদর করতেন বিল্লাল।

তিনি বলেন, চাকরির ফাঁকে ছোট্ট একটা দোকান দিয়েছিলেন বাসার কাছেই। সেখানে টেইলার্সের কিছু কাপড়-চোপড় উঠিয়েছিলেন। মুক্তা (বিল্লালের স্ত্রী) টেইলার্সের কাজ করতে পারত। মুক্তা গর্ভবতী হওয়ার পর দোকান ছেড়ে দিয়েছিল। মালামাল বাসায় রেখে দিয়েছিল। বাচ্চা হাওয়ার পর আবার দোকান দেয়ার ইচ্ছে ছিল।

রাজু আরও বলেন, মুক্তা সাড়ে ৬ বা ৭ মাসের গর্ভবতী ছিল। এজন্য তাকে বাড়িতে রেখে আসার জন্য রওয়ানা করেছিল। তা না হলে সবার সঙ্গে আগেই চলে যেত।

উল্লেখ্য, সদরঘাটে রশি ছিঁড়ে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় দুই লঞ্চের পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ফারহান ৬ এর দুই মাস্টার ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গতিতে লঞ্চ চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

FI
আরও পড়ুন