ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

ভাসমান হাটবাজারে দেড় কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১০ পিএম

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় নদীর বুকে বসে হাটবাজার। প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার উপজেলার বৈঠাকাটা বাজার সংলগ্ন বেলুয়া নদীতে বসে এই ভাসমান হাটবাজার।

জানা যায়, নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বৈঠাকাটা বাজার ও বেলুয়া মুগারঝোর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বেলুয়া নদী। প্রায় ৬৬ বছর আগে থেকে বছরের মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে ভাসমান তরমুজের বেচাকেনা। প্রতি হাটে বেচাবিক্রি ছাড়িয়ে যায় প্রায় দেড় কোটি টাকা। রাজধানী ঢাকা, খুলনা, যশোর, নরসিংদী এবং রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এই হাটে তরমুজ কিনতে আসেন। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে তরমুজ বিক্রি করে ভালো দামও পান।

গত ৬ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা যায়, সকালেই বেলুয়া নদীর ভাসমান বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ থেকে ৫০টি ট্রলার বোঝাই করে হাটে তরমুজ নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ট্রলারে উঠে দরদাম করছেন। এতে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম তরমুজের হাট। দামে মিললে ক্রেতারা ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে আরেক ট্রলারে তুলছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে ছোট নৌকায় তুলছেন। অনেক ব্যবসায়ী ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে পাশের বৈঠাকাটা বাজারে রাখা ট্রাকে বোঝাই করছেন। 

পাইকারী দরে ভাসমান বাজারে তরমুজ বিক্রি করতে আসা রবিউল তালুকদার বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোর চরাঞ্চলে প্রচুর তরমুজ আবাদ হচ্ছে। আমরা খেত হিসেবে তরমুজ কিনি। প্রতি বিঘা খেতের দাম পড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। এরপর খেত থেকে তরমুজ কেটে আকারভেদে পাইকারী বাজারে বিক্রি করি। পাইকারি বাজারে শত (১০০টি) হিসেবে তরমুজ বিক্রি হয়।

বৈঠাকাটা বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন জানান, ভোলার চরফ্যাশন,পটুয়াখালী, বরগুনার বিভিন্ন চরে আবাদ করা তরমুজের খেত কেনেন ব্যবসায়ীরা। এরপর খেত থেকে পাকা তরমুজ ট্রলারে করে বৈঠাকাটাসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। বড় আকারের ১০০টি তরমুজের পাইকারি মূল্য ২২ হাজার থেকে ২৫ হাজার। মাঝারি আকারের তরমুজ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। ছোট তরমুজ আকার ভেদে ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। হাট থেকে তরমুজ স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বড় ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। 

হাট থেকে নিয়মিত তরমুজ কিনতে আসা উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মো. আজিজুল শেখ জানান, প্রতি হাটে দেড় থেকে ২ কোটি টাকার তরমুজ কেনাবেচা হয়।

বৈঠাকাটা বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক মাসুদ রানা তালুকদার বলেন, বাজারটি একশত বছরের পুরানো। বাজারে বিভিন্ন জেলা থেকে কাচাঁমাল ট্রলারযোগে আসে ট্রলারেই হাট বসে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তরমুজের বাজারে জমজমাট কেনাবেচা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাসনত ডালিম বলেন, ভাসমান সবজি চাষে বিখ্যাতের পাশাপাশি ভাসমান বাজারও এখানে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। নৌপথে পণ্যপরিবহন সহজ হওয়ায় এবং খরচের পরিমান কমে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই ভাসমান বাজারটি ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে অনেক পছন্দের। 

AHA/SA
আরও পড়ুন