পিরোজপুরে হাসপাতালে খাবার সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগ

আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৪ পিএম
পিরোজপুরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
 
রোগীদের অভিযোগ, তাদের তালিকা অনুযায়ী খাবার দেওয়া হয় না এবং যা দেওয়া হয় তা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম ও নিম্নমানের। এছাড়া নির্ধারিত আসনের বিপরীতে রোগী বেশি থাকায় রয়েছে খাবার না পাওয়ার অভিযোগ। ফলে ভর্তি হওয়া রোগীদের যেমন বাড়ছে ভোগান্তি, তেমনি বাড়ছে খরচও।
 
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের দাবি, খাবারের জন্য যে বরাদ্দ রয়েছে তাতে মানসম্মত খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর খাবার সরবরাহে কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সিভিল সার্জন।
 
রোগীরা অভিযোগ করেন, সকালের নাস্তার জন্য দুইটি পাউরুটি, একটি ডিম, সামান্য চিনি ও একটি কলা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ৪ ইঞ্চি আকারের একটি সবরি জাতের কলা দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় ছোট একটি চিনিচাপা জাতের কলা। দুপুরের খাবারে মাছ দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় মুরগীর মাংস। ৬০ গ্রামের উপরে এক টুকরো মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় ৫০ গ্রামের কম ওজনের মাংসের টুকরো। বাজারে মাছের দাম মুরগির তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় প্রায় দিনই মাছের পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে মুরগি। পরিমাণেও দিচ্ছে কম।
 
 
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিভাগে ভর্তি রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি প্রতিদিন সরকারিভাবে ১৭৫ টাকা মূল্যের ৩ বেলা খাবার (সকালে নাশতা, দুপুরে ও রাতে ভাত) দেওয়া হয়। এছাড়া বিশেষ দিবসে প্রতি রোগীকে ২০০ টাকার খাবার দেওয়া হয়।
 
দরপত্রের শর্ত অনুয়ায়ী, হাসপাতালে প্রতিদিন দুপুর ও রাতে ২৮ ইরি চালের ৩৩০ গ্রাম ভাত, সপ্তাহে পাঁচ দিন মাছ ও মাংস ৬৩.৬৬ গ্রাম করে দুই বেলা দেওয়ার কথা। সপ্তাহে দুইদিন মাছ ও ডিম দেওয়ার কথা।
 
এছাড়া প্রতিদিন সকালে রোগীদের দুটি পাউরুটি, একটি সিদ্ধ ডিম ও একটি পাকা সবরি কলা দেওয়ার কথা। কিন্তু মাছ-মাংসের অংশ আকারে ছোট, কলাও ছোট ও নিম্নমানের পাউরুটি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মসলার পরিমাণ কম দিয়ে তরকারি রান্না করে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে, যেটি খেতে রোগীরা আগ্রহী হচ্ছেন না।
 
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দরপত্র মূল্যায়নে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি ছিল শেখ এন্ড সন্স ট্রেডার্স। বেশি দরে খাবার সরবরাহের দরপত্র বাগিয়ে নিলেও রোগীদের পাতে দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের খাবার। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পরে আর কোনো দরপত্র আহ্বান করেনি জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে দরপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালের খাবার সরবরাহ করছে।
 
 
রাধুনী লাইলি আক্তার বলেন, আজকে মাছ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাছের পরিবর্তে মাংস দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার মাছের পরিবর্তে মাংস পাঠিয়েছে। তাই মাংস দিয়েছি। বাজারে আজ সবরি কলা পাওয়া যায়নি। তাই চিনিচাপা কলা দেয়া হয়েছে। সবকিছুই ঠিক। কিন্তু রোগীর অভিযোগ থাকবেই। 
 
সিভিল সার্জন, ডা. মো. মতিউর রহমান জানান, পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে সকল বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি আছে। আমি প্রায়ই কমিটির সদস্যদের সাথে নিয়ে পরিদর্শন করি। আপনাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাল আমরা আরএমও সাহেবসহ আমাদের যে ঠিকাদার আছে, তাদের সাথে নিয়ে পরিদর্শন করবো। আশা করি, শীঘ্রই আমরা সব সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
 
গত জানুয়ারি মাসে পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে দুদকের ৫ সদস্যের একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শন করে খাবারের পরিমাণ কম দেওয়ার সত্যতা পেয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে। তবে সচেতন মহলের দাবি, দুদক থেকে সতর্ক করার পরেও কোন ভ্রুক্ষেপ করেনি কর্তৃপক্ষ।
NJ
আরও পড়ুন