ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মেঘনা নদীরপাড়ে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক স্টিল রাইস সাইলো। পুষ্টিগুণ অটুট রেখে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত এ সাইলোতে চাল সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী খাদ্যশস্য সংরক্ষণাগার বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নানা সংকটে দীর্ঘ ৬ বছরেও সাইলোটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কয়েক দফায় বাড়ানো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বর মাসে। এখনও ঢিমেতালেই চলছে নির্মাণ কাজ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টিল রাইস সাইলো প্রকল্পের পরিচালক মো. রেজাউল করিম শেখ জানান, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশের কিছু বেশি। ফলে বর্ধিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনার কারণে প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কিছু সমস্যার কারণে এক-দেড় বছর কোনো কাজই করা যায়নি। ফলে কয়েক দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আশা করি ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না বলে তিনি জানিয়েছেন।
নির্মাণাধীন স্টিল রাইস সাইলোটি ঘুরে দেখা গেছে, ৩০টি বিনের সবকটির স্থাপন কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে নদী থেকে সাইলো পর্যন্ত জেটি, টপ সাইলো স্টিল ব্রিজ, টপ সাইলো স্টিল কলাম, বাল্ক ট্রাক রিসিভিং (বিটিআর) অবকাঠামো ও ট্রাক স্কেল ল্যাব ওয়েটসহ অন্যান্য অবশিষ্ট কাজগুলো চলছে। কাজে খুব একটা গতি লক্ষ্য করা যায়নি। অনেকটা ঢিমেতালে চলছে। তবে বিদেশ থেকে সাইলোর সব যন্ত্রাংশ চলে এসেছে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।
তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মো. নিশাত হোসাইন বলেন, সাইলোর বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আসে। কিন্তু করোনাকালে কোনো যন্ত্রাংশ আমদানি করা যায়নি। এছাড়া করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল। পরবর্তীতে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি নতুন করে সংকটে ফেলে। এতে করে কাজের অগ্রগতি কম হয়েছে। তবে সব সংকট কাটিয়ে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
প্রতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিপুল পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ করে খাদ্য বিভাগ। সংগৃহীত এসব ধান-চাল রাখা হয় খাদ্যগুদামগুলোতে। জেলার খাদ্যগুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ২১,৫০০ মেট্রিক টন।
বর্তমানে আশুগঞ্জে রয়েছে একটি সাইলো। যেখানে গম সংরক্ষণ করা হয়। আর ধান ও চাল সংরক্ষণ করা হয় খাদ্যগুদামে। তবে জেলায় প্রতি মৌসুমে যে পরিমাণ ধান ও চাল সংগ্রহ করা হয় তা বিতরণের পর বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত থাকে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় উদ্বৃত্ত চালগুলো সংরক্ষণের জন্য পাঠানো হয় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার খাদ্যগুদামে।
চাল সংরক্ষণের সংকট নিরসনে সরকারের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের আওতায় আশুগঞ্জে নতুন একটি স্টিল রাইস সাইলো নির্মাণের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ২০১৮ সালের এপ্রিলে চুক্তি করে খাদ্য অধিদপ্তর। ১ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার সাইলোটি নির্মাণে ব্যায় ধরা হয় ৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা। আর প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২ বছর। আধুনিক এ সাইলোটিতে ৩০টি বিন রাখা হয়েছে। একেকটি বিনে সংরক্ষণ করা যাবে ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল। এছাড়া স্টিল রাইস সাইলোটিতে স্বয়ংক্রিয় তাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে আদ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ২ বছর পর্যন্ত চালের পুষ্টিগুণ অটুট রেখে সংরক্ষণ করা যাবে। সংরক্ষিত চাল প্যাকেটজাত ও বস্তাবন্দি করতে ঘণ্টায় ৫০০ টন স্পিডের বেল্ট কনভেয়িং এবং চেইন কনভেয়িং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
