বর্ষা এলেই চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খাল-বিল, নদী-নালায় শুরু হয় মাছ ধরার উৎসব। আধুনিকতার ছোঁয়া ও কারেন্ট জালের দৌরাত্ম্য বাড়লেও বাঁশ-বেতের তৈরি চাঁই, পলো ও আনতার মতো দেশীয় ফাঁদ এখনো বেশ জনপ্রিয় এই এলাকায়।
শুধু পেট ভরানো নয়, বরং এ সরঞ্জামগুলো গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য ঐতিহ্য। তাই মিরসরাইয়ের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে বর্ষার পানির সঙ্গে আজও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে এই মাছ ধরার সরঞ্জাম।
বর্ষার আগ মুহূর্তে গ্রামে গ্রামে শুরু হয় ফাঁদ তৈরির ধুম। ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাঁশ-বেতের কারিগররা। জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত এসব ফাঁদের বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় হাটবাজারে তখন পাওয়া যায় বিভিন্ন আকারের চাঁই, পলো ও আনতা। তবে একসময় গ্রামে গ্রামে এসব ফাঁদের ব্যবহার বেশি থাকলেও এখন কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও দক্ষ কারিগরের অভাবে উৎপাদন কমে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, চাঁই এখনো মানুষের কাছে জনপ্রিয়। সাধারণত খাল-বিল কিংবা ডুবে যাওয়া ক্ষেতে ফেলা হয়। এখান থেকে শোল, শিং, কৈ, খইলসা, পুঁটি ও দেশীয় চিংড়ি সহজেই ধরা পড়ে। এখন আবার বড় আকারের চাঁই তৈরি হচ্ছে, যেগুলোতে রুই-কাতলও ধরা সম্ভব।
স্থানীয় গ্রামীণ সরঞ্জাম তৈরির কারিগর মো. সোলেমান জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে আমি চাঁই, পলো ও আনতা তৈরি করছি। জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন দামও বেড়েছে। আকারভেদে প্রতিটি ফাঁদ ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অপকা’র নির্বাহী পরিচালক মো. আলমগীর বলেন, দেশীয় এসব ফাঁদ শুধু মাছ শিকারিদের জীবিকা নয়, বরং আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ। তবে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও কারেন্ট জালের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ ঐতিহ্য হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা উদ্যোগ নিলে এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ সম্ভব।
