ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সুপেয় পানির খোঁজে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে আসার আশঙ্কা

আপডেট : ০২ জুন ২০২৪, ০৮:৪২ এএম

ঘূর্ণিঝড় রিমালে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে সুন্দরবনের মিঠা পানির আধার শতাধিক পুকুর ও জলাশয় লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে। যার ফলে সুপেয় পানির খোঁজে বনের হরিণ ও বাঘসহ বন্যপ্রাণীদের লোকালয়ে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী মানুষের হাতে বন্যপ্রাণীদের জীবনহানির আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনের পানি ও মাটিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। কমে গেছে মিঠা পানির প্রবাহ। অতিরিক্ত লবণাক্ততা বদলে দিচ্ছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় সৃষ্টি জলোচ্ছাসে পুরো সুন্দরবন লবণ পানিতে প্লাবিত হওয়া। বিশেষ করে ১০-১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে সুন্দরবনের অভ্যন্তরের মিঠা পানির আধার শতাধিক পুকুর ও জলাশয় লবণাক্ত পানিতে ডুবে গেছে। যার কারণে বন্যপ্রাণীদের জন্য চরমভাবে সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে মিঠা পানির খোঁজে হরিণ ও বাঘসহ সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীদের পার্শ্ববর্তী লোকালয়ে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি বাঘ ও হরিণ লোকালয়ে প্রবেশ করে মানুষের নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, এবারের জলোচ্ছাসের কারণে সুন্দরবনে বেশি মাত্রায় লবণাক্ত বেড়ে গেছে। যার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের ওপর। সুন্দরবনের যে জলাধারগুলোতে বন্যপ্রাণীরা মিঠা পানি খেতে আসত, এখন সেই জলাধারে আর তারা মিঠা পানি পাবে না। এটা বন্যপ্রাণীদের জন্য বড় ধরনের একটি ঝুঁকি তৈরি করবে।

তিনি আরও বলেন, ফলে মিঠা পানির জন্য বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে। এতে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ের পাশের মানুষের হামলার শিকার হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, জলোচ্ছাসের জন্য যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে হরিণ বা বন্যশূকর মারা গেছে। তবে বাঘ হচ্ছে বিড়াল প্রজাতির। ফলে জলোচ্ছাসের সময় তারা হয়তো গাছে আশ্রয় নিতে পারে; অথবা তারা কোনো নিরাপদ জায়গায় লুকিয়ে ছিল। যে কারণে বাঘ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। এর আগের ঝড় ও জলোচ্ছাসের সময়ও বাঘ মারা গেছে কম। কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে বেশি। তবে সামনে একটি সুবিধা আছে, তা হচ্ছে, জুন-জুলাইয়ে (বর্ষা মৌসুম) বৃষ্টির পানি পাওয়া যাবে। তখন লবণাক্ত পানি কমে যাবে। ফলে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীদের খুব একটা সুপেয় পানির সমস্যা থাকবে না।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, যেহেতু বন্যপ্রাণীরা মিঠা পানি খায়, স্বাভাবিকভাবেই সেই লবণ পানি মানুষের ক্ষেত্রে যে ধরনের ক্ষতিকর ঘটনা ঘটায়, মিঠা পানির অভাবে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীদের সেই একই অবস্থা হবে। মূলত মিঠা পানির অভাবে পানি শূন্যতাসহ যে শারীরিক সমস্যাগুলো তৈরি হওয়ার কথা তাদের ক্ষেত্রেও তা-ই হবে। তবে বন্যপ্রাণীরা তো প্রকৃতির জীব-ফলে কোনো না কোনোভাবে তারা প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে। আর কিছু প্রাণী খাপ খাওয়াতে না পারলে তাদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হবে। এমনকি তারা মারাও যাবে।

বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার কর্মকর্তা মফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, এবারের ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় জলোচ্ছাসে সুন্দরবনের গাছপালার চেয়ে পশুপাখির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। সুন্দরবনের যেসব জায়গা উঁচু তা সর্ব্বোচ্চ ৮ ফুট। অথচ সেখানে পানি উঠেছে ১০-১২ ফিট। টানা ৩৬-৩৭ ঘণ্টা পুরো সুন্দরবন লবণপানির নিচে ছিল। ফলে এবার বন্যপ্রাণীর মৃতের সংখ্যা অন্য যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

AHA/FI
আরও পড়ুন