ভালো ফলনের আশায় চড়া দামে ধান বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলার কৃষক। বায়ার কোম্পানির ‘ধানী গোল্ড’ হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ কিনে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। বীজ কিনে জমিতে লাগানোর পর প্রায় ৪০ শতাংশ বীজ থেকে চারা গজাচ্ছে না। যেসব বীজ থেকে ধানের চারা গজিয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই রোগাটে। এ নিয়ে ফলন নিয়েও শঙ্কায় রয়েছে তারা। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
কুমারখালীর কৃষক সোহেল রানা বলেন, কুষ্টিয়া কলেজ মোড় থেকে চার ব্যাগ (চার কেজি) ধানী গোল্ড ধানের বীজ কিনেছিলাম। প্রতি কেজি বীজের দাম ৪৩৫ টাকা। আমি ধানী গোল্ড কোম্পানির নির্দেশনা মতো সবকিছু সুন্দরভাবে করেছি। কিন্তু বীজের অর্ধেকের কম পরিমাণ চারা গজালেও বাকিটা চারাগুলো গজায়নি। আমি গরীব মানুষ। ধানী গোল্ড বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি ক্ষতিপূরণ চাই। এবং এই সমস্যার সমাধান চাই। আমার এলাকায় ও আশেপাশের এলাকার কৃষকরাও ধানী গোল্ড বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন।
কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিংদহ গ্রামের জিন্দার আলীর ছেলে কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিন আগে কুষ্টিয়া কলেজ মোড় থেকে ১০ কেজি ধানী গোল্ড বীজ কিনেছি। অর্ধেক বীজই নষ্ট। কোম্পানির নির্দেশনা মেনে প্রথমে পানিতে ধান বীজ ভিজিয়ে রাখি। পরে পানি থেকে তুলে চারা গজানোর জন্য জাগ দেই। কিন্তু অর্ধেক বীজ থেকে চারা গজায়নি।

যুবক কৃষি উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ১০ বিঘা জমিতে ধান রোপণের জন্য ২০ কেজি ধানী গোল্ড বীজ কিনেছি। ওই কোম্পানির নির্দেশনা মেনে ধান বীজ ছিটিয়ে দিয়েছি বীজতলায়। কিন্তু ৩০ শতাংশ বীজ থেকে চারা হয়নি। তাছাড়া গজানো ধানের চারাগুলো দুর্বল ও রোগাটে। এনিয়ে আমরা চিন্তিত। ধান লাগানোর জন্য ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছি। কিন্তু বীজ থেকে চারা না হওয়ায় তিন থেকে চার বিঘা জমিতে ধান লাগাতে পারবো না। ধানী গোল্ড বীজ কিনে আমার মতো অসংখ্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আবারও বীজ কিনতে হচ্ছে চাষিদের। এতে করে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই। একই সাথে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।
মনিরুল, সোহেল রানার মতো একইভাবে বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলার বেশি সংখ্যক কৃষক। তারা বলেন, ভালো ফলনের আশায় চড়া দামে এসিআই কোম্পানির ধানী গোল্ড বীজ কিনে আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। প্রায় ৪০ শতাংশ বীজ নষ্ট। ৬০ শতাংশ বীজ থেকে চারা হয়েছে এবং ৪০ শতাংশ বীজ থেকে চারা হয়নি। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। ধানের চারাও রোগাটে হয়েছে। ফলে ধানের ফলন নিয়েও শঙ্কায় রয়েছি । আমরা এর ক্ষতিপূরণ চাই।

ভাদালিয়া বাজারের বীজ ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান বলেন, ধানী গোল্ড ধানের বীজ থেকে ঠিকমতো চারা হচ্ছে না। ৫-৬ জন কৃষক আমার দোকান থেকে বীজ কিনেছিল। তাদের এমন সমস্যা হওয়ার কারণে তিন-চারটা দিন আগে থেকে ধানী গোল্ড ধানের বীজ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছি।
আব্দুল হান্নানের মতো অনেক বীজ ব্যবসায়ী ধানী গোল্ড ধানের বীজ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারাও এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত কোম্পানির কুষ্টিয়ার এরিয়া ম্যানেজার আনোয়ার হোসেনের দৈনিক খবর সংযোগকে জানান, ধানী গোল্ড বীজের মান খুবই ভালো। কিন্তু এবার অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে হয়তো চারা গজায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের কেউ অভিযোগ দিলে তাদেরকে ক্রয়ের সমপরিমাণ ভালো বীজ দেয়া হবে। এমনকি ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ পেলে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল, কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসার দেবাশীষ কুমার দাস সহ কৃষি কর্মকর্তারা বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, এখনো কোনো কৃষক অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি জানি না। আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি জানতাম না। যেহেতু আপনার মাধ্যমে জানলাম। তাই অতি দ্রুত বীজ সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করবো। তদন্ত ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
