ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

শৈলকুপায় রাস্তা সরলীকরণে ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কা

আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম

স্বামী ছেড়ে গেছে ২০ বছর আগে। ৩ মেয়ে নিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন নাসিমা খাতুন। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় শেখপাড়া বাজারের পাশের শীতালীডাঙ্গা মৌজায় এক কোণে স্বামীর ফেলে যাওয়া সামান্য ভিটায় খুপড়ি ঘরে আশ্রয় তার। দিন চলে ছাত্রাবাসে রান্না করে। এবার শেষ আশ্রয়টুকুও হারানোর পথে। সড়ক সরলীকরণের নামে সেই জমি অধিগ্রহণ হতে চলেছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাসিমা বলেন, ভিটাটা ছাড়া আমার কিছু নাই। রাস্তা হলে থাকব কোথায়? মেয়েগুলো নিয়ে কার দরজায় দাঁড়াবো? সরকার যদি উন্নয়নই করে, আমাদের বাঁচার জায়গাটুকু রাখবে না কেন?” এই জমিতে আমার ৭ ননদ, ৩ দেবর-ভাসুর আর শাশুড়ির ভাগ রয়েছে। যে টাকা পাবো, সবই তো ভাগ হয়ে যাব। তখন আমি কোথায় গিয়ে থাকব?


তার পাশেই থাকেন ফাতেমা খাতুন। স্বামী ইজিবাইক চালিয়ে কোনোরকমে সংসার চালান। ঘরে ৫ জন সদস্য। জমি বলতে ছোট্ট বাড়িটুকুই। সেইটিও চলে যাচ্ছে প্রকল্পের অধিগ্রহণ তালিকায়।

“এই বাড়িটা ছাড়া আর কোথাও জায়গা নাই। জমির দাম বলে যে টাকা দিচ্ছে, তা ন্যায্য না। ওই টাকায় নতুন জায়গা কেনা তো দূরের কথা, ভাড়া ঘর করাও সম্ভব না,” এ কথা বলতে বলতে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠেন ফাতেমা খাতুন।

এমন করুণ গল্প শুধু নাসিমা আর ফাতেমার নয়। পুরো শেখপাড়া বাজারেই চলছে বেদনার মিছিল। শেখপাড়া-লাঙ্গলবাধ সড়কের বাঁক সরলীকরণ প্রকল্পে শেখপাড়া বাজার এলাকায় প্রায়সাড়ে ৩০০ মিটার রাস্তা তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। এতে উচ্ছেদ হতে যাচ্ছে অন্তত ১৫ থেকে ২০টি পরিবার। ভেঙে ফেলা হবে অর্ধ শতাধিক দোকানপাট, পাকা দালান, এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত।


স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়নের নামে মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দেওয়া হবে। অথচ বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। ন্যায্য ক্ষতিপূরণের জায়গায় দেওয়া হচ্ছে অবাস্তব পরিমাণ অর্থ। ফলে প্রভাবশালী আত্মীয়স্বজন বা দালালদের ভাগে চলে গেলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা নিঃস্ব হয়ে পড়বে।

ক্ষতিগ্রস্ত শহীদুল ইসলাম বলেন, বাজারের সাথেই আমার পারিবারিক কবরস্থান। এখানে শুয়ে আছে আমার মা-বাবাসহ আত্মীয়রা। সেই কবরস্থানও উচ্ছেদ করা হবে। আমাদের ঘরবাড়ি, দোকান, কবরস্থান- সব মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে আমরা বাঁচব কীভাবে?”

গোলাম কাদের নামের এক বাসিন্দা বলেন, আমরা বলেছিলাম ডিএম কলেজের সামনে থেকে রাস্তা তৈরি করতে। তাহলে আমাদের এত ক্ষতি হবে না। কিন্তু ডিসি অফিস আর সড়ক বিভাগের লোকজন আমাদের কথা কানেই তুলছেন না। জোর করেই আমাদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা চাই আমাদের ঘরবাড়ি না ভেঙ্গে বিকল্প কোন ব্যবস্থা করুক।


এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বাঁক সরলীকরণের জন্য অনেক আগে থেকেই এই প্রক্রিয়া চলমান আছে। কারো যদি কোন সমস্যা থাকে, তাহলে সেটা ডিসি অফিসে কমপ্লেন করবে। আমাদের কাজ জমি বুঝে নিয়ে কাজ করা।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার আহমেদ সাদাত কথা বলতে রাজি হননি।

NJ
আরও পড়ুন