রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই ঝিনাইদহের মহেশপুরে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশি ফল প্যাশন বা আনারকলি চাষ করে সফল হয়েছেন মাহমুদ হাসান স্টালিন নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা। দেশের পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে কয়েক বছর আগেই ফলটির চাষ শুরু হয়। তবে এই প্রথম সমতলে আনারকলির বাণিজ্যিকচাষ শুরু করেছেন স্টালিন। তিনি উপজেলার পান্তাপাড়া ইউনিয়নের ঘুঘরি গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, মৃদু টক-মিষ্টি স্বাদের ফল প্রতি পিস পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে আনারকলি ফল চাষ করা যায়। যে কারণে এর উৎপাদন খরচও কম। ফলে নেই কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি। স্বাদে-গন্ধে অনন্য এ ফলের আবাদে দেশের ফল উৎপাদনে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান স্টালিন জানান, ৬-৭ বছর আগে তিনি কৃষিকাজ শুরু করেন। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিকাজে নতুনত্ব আনতে চেয়েছেন। প্রথমদিকে প্রায় ৬ বিঘা জমিতে ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারা ও আঙুর চাষ শুরু করেন। ২০২২ সালের মাঝামাঝি প্যাশন ফ্রুটের খবর দেখে আগ্রহী হন। ওই বছরই পরীক্ষামূলকভাবে ২ শতাংশ জমিতে চাষ করেন।
গত বছর বাগান থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেন। চলতি বছর প্রায় ১ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। গড়ে মাত্র দুই শতক জমিতে এ ফল চাষ করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে আরও আড়াই বিঘা জমিতে আবাদ শুরু করেছেন।
স্টালিন বলেন, প্রথমে যখন আবাদ শুরু করি, তখন কেউ এ ফল চিনতো না। এখন ইউটিউব-ফেসবুক দেখে অনেকেই আনারকলি ফল চেনেন। যে কারণে স্থানীয় বাজারেও চাহিদা বাড়ছে। প্রতি পিস আনারকলি পাইকারি ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি করা হয়।
তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, দুই শতক জমিতে আনারকলি আবাদ করে ফলন ভালো হয়েছে। যে কারণে এখন আরও আড়াই বিঘা জমিতে আবাদ বাড়িয়েছি। বছরে ১ বিঘা জমিতে গড়ে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার আনারকলি বিক্রি করা সম্ভব।

স্টালিন আরও জানায়, আনারকলি মাচায় চাষ করতে হয়। প্রতিটি গাছের ডগায় প্রচুর ফল ধরে। এ ফল চাষ করতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না। জৈব পদ্ধতিতে আবাদ করা যায়। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। ভিটামিন-সি, আয়রন, জিংক ও ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এ ফল।
মহেশপুরের ঘুঘরি গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে স্টালিনের আনারকলি ফলের বাগান দেখতে শতশত মানুষ আসে। মাত্র দুই শতক জমির বাগানে হাজার হাজার ফল ধরে। এই ফলের উৎপাদন অনেক বেশি। আনারকলি ফল খেতেও মজাদার।
স্থানীয় কৃষক অনিক হোসেন বলেন, আমরা আগে এই ফল চিনতাম না। স্টালিনের বাগান দেখে অনেকেই হাসাহাসি করতো। ফল ধরার পর সবাই অবাক। প্রতিটি গাছে হাজার হাজার ফল ধরে। এই ফল কিনতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, নোয়াখালী, কুমিল্লা, যশোর, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মাদারিপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ময়ময়সিংহ, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসছে।

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান স্টালিন বলেন, বিঘা প্রতি আনারকলি চাষ করলে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকার ফল বিক্রি করা সম্ভব। এই ফল পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়। উৎপাদন খরচ খুবই কম। বর্তমানে ফল উৎপাদনের পাশাপাশি চারা উৎপাদন শুরু করেছি। অনেকেই এসে চারা নিয়ে যাচ্ছেন।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঝিনাইদহে নানা জাতের দেশি-বিদেশি ফল উৎপাদন হচ্ছে। মহেশপুরের মাহমুদ হাসান স্টালিন বিদেশি প্যাশন ফ্রুট চাষ করে দারুণ ফলন পেয়েছেন। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে স্টালিনসহ সব কৃষককে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
