বাবার কথা অমান্য করে ৪ বছর আগের শুধুই কৌতূহল ও আগ্রহ থেকে ইউটিউব দেখে ৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের কমলা চাষ করেন হাবিবুর। কমলা চাষে বাবার বকুনিতে রাগ করে ৩ দিন পর্যন্ত বাড়িতে ভাত খাননি তিনি। তারপরও হাল ছাড়েননি হাবিবুরের আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রমে অবশেষে পেয়েছেন সফলতা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বেগমপুর গ্রামে ঢুকতেই চোঁখে পড়ে সারি সারি কমলার বাগান। দূর থেকেই পাকা কমলার মিষ্টি গন্ধ যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শুধুই কৌতূহল ও আগ্রহ থেকে ইউটিউব দেখে শুরু করেছিলেন বিদেশি ফল চাষের এক নতুন অধ্যায়। আজ সেই আগ্রহই তাকে এনে দিয়েছে বাড়তি আয়ের নতুন এক সম্ভাবনা।
কমলা চাষি হাবিবুর রহমান জানান, কমলা চাষে তার যাত্রাটা খুব একটা সহজ ছিল না। তবে ইউটিউবে দেখলাম দেশে-বিদেশে অনেকেই কমলা চাষ করছে। ভাবলাম আমিও চেষ্টা করে দেখি। এরপরই সাহস নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের কমলার চারা রোপণ করি। এতে করে প্রতিবেশিদের কটু কথা আর বাবার বকুনি খেতে হয়েছে। রাগ করে বাড়িতে ৪ দিন পর্যন্ত ভাত খাইনি। তারপরও হাল ছাড়িনি আমি।
তিনি আরও জানান, শুরুর বছরগুলোতে পরিচর্যা, সারপানি ও রোগবালাই নিয়েই দুশ্চিন্তায় ছিলাম বেশি। ধীরে ধীরে চারাগুলো বড় হলো, ঝোপালো হলো, আর তিন বছরের মাথায় দেখা দিল প্রথম ফুল ফল। চলতি বছর বাগানের দৃশ্যটাই আলাদা। প্রতিটি গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে থোকায় থোকায় হলুদ কমলা। কোথাও কাঁচা, কোথাও আধাপাকা, আর কোথাও পুরোপুরি রঙ ধরেছে। বাগানজুড়ে যেন উৎসবের আমেজ।
হাবিবুর জানান, আমার বাগানের প্রতিটা গাছে ৩ থেকে ৫ মণ করে কমলা হয়েছে। খরচ হয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকার মতো। আশা করছি এবার প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারব।
কমলার বাজারও বেশ জমজমাট। প্রতিদিন মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা এমনকি দূরের জেলা থেকে মানুষ আসছেন বাগানটি দেখতে। কেউ ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ পরামর্শ নিচ্ছেন নিজেরাও কমলা চাষ শুরু করবেন বলে।
বাগানের কর্মচারী সোহাগ হোসেন বলেন, আমি এই কমলা বাগানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থাকি এবং দেখা শোনা করি। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে কেউ কমলা কিনতে, কেউবা বাগান দেখতে।
জেলা শহর থেকে কমলা কিনতে আসা ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসা জীবনে অনেক জায়গা থেকে কমলা কিনেছি তবে এই কমলাটা অন্য কমলার চেয়ে বেশি মৃষ্টি ও সুসাদু।
দর্শনার্থী মইন উদ্দিন বলেন, লোকমুখে শুনে কোটচাদপুর থেকে কমলা বাগান দেখতে এসেছি। আসলেই এই কমলা মৃষ্টি ও সুস্বাদু যা অন্য কমলার চাইতে ভিন্ন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে হাবিবুর বলেন, তিনি আরও জমি নিয়ে বাগান বড় করতে চান। পাশাপাশি কমলা সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য একটি আধুনিক গুদাম ও প্যাকহাউস নির্মাণের ইচ্ছাও আছে তার।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা জানান, মহেশপুর অঞ্চলের মাটি সব ধরনের ফলচাষের জন্য উপযোগী। কমলা, মাল্টা ও লেবুজাতীয় ফসলে এখানে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর হাবিবুরের বাগানটি আমাদের জন্যও একটা সফলতার উদাহরণ। মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে। রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক পরিচর্যার সব ধরনের পরামর্শ আমরা তাদের দিয়ে যাচ্ছি।
মহেশপুরের এই কমলা বাগান শুধু একজন কৃষকের সফলতা নয় এটি বদলে দিতে পারে পুরো অঞ্চলের কৃষি বৈচিত্র্য ও আর্থিক চিত্র। ৪ বছর আগের ইউটিউব ভিডিওতে জন্ম নেওয়া এক কৌতূহল আজ বাস্তব রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি করা এক বাণিজ্যিক বাগান। কমলার সুবাস এখন বেগমপুর গ্রামের নতুন পরিচয়।
কাউখালীতে মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা
আনারকলি চাষে বাড়ছে নতুন সম্ভাবনা