গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত নাকাই ইউনিয়নের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী শাহীন। খুদে বিজ্ঞানী শাহীন নামেই এলাকায় পরিচিত পেয়েছেন তিনি। অভিনব সব যন্ত্র আবিষ্কার করে জেলাজুড়ে রীতিমতো তোলপাড় তুলেছেন এ খুদে বিজ্ঞানী।
শাহিন আবিস্কার করেছেন একটি মাষ্টার ডিভাইস বোর্ড। যে ডিভাইসের মাধ্যমে অতি প্রয়োজনীয় কমপক্ষে ১৫ টি কাজ করা যাবে। যেমন কোথাও বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে স্বয়সক্রিয়ভাবে সেই তথ্য বিদ্যুৎ অফিসে পৌঁছে যাবে। হাতের রিমোট দিয়ে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বন্ধ বা চালু করা যাবে বাসার লাইট, পানি তোলার মোটরসহ ইলেকট্রিক সবকিছু।
আবার মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোর, সেটাও সম্ভব নয়। চুরি করতে ধরলেই হাতে থাকা মোবাইলে এলার্ম এবং লোকেশন চলে আসবে। ডিভাইসে থাকা নাম্বারে কল দিলেই গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাবে। মালিক না চাইলে গাড়িটি আর চালু করতে পারবে না চোর।
বিদ্যুতের খুটির ব্যাড়েল পড়ে গেলে সেটিও তোলা যাবে মোবাইল কলের মাধ্যমে। সর্বশেষ কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই তথ্য বিদ্যুৎ অফিসে পৌঁছে যাবে। শুধু তাই নয় মোবাইল ফোনের গোপনীয়তা রক্ষার্থে এমন এক ধরনের বিশেষ চশমা তৈরি করেছেন, যা ব্যবহারকারী নিজের মোবাইল স্কিনকে সঠিক দেখবেন। কিন্তু অন্যরা মোবাইলের স্ক্রিনকে চোখে একদম সাদা দেখতে পাবেন।
ছোট বেলা থেকেই তিনি যখন যেমন সমস্যা দেখেন সেগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করেন। এজন্য হাতের কাছে পাওয়া জিনিষপত্র দিয়ে বানিয়ে ফেলেন কোন যন্ত্র বা ডিভাইস। তার সব প্রচেষ্টার মধ্যেই রয়েছে সাশ্রয়ী মুল্যে সেই যন্ত্র বা ডিভাইস গুলো মানুষের হাতে পৌছে দেয়া।
খুদে বিজ্ঞানী শাহীন মিয়া জানান, তার এই আবিস্কার এবং গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দরিদ্রতা। সরকারি কিংবা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার এই আবিস্কার দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
ছোট বেলায় বাবা হারানো পরিবারে মায়ের কষ্টের সংসারের অদম্য মেধাবী শাহীন অর্থাভাবে তার প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে না। এমন প্রতিভা সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের জন্য বড় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করেন তার পরিবারর ও স্থানীয়রা।
খুদে বিজ্ঞানী শাহীন মিয়ার বোন শাহানা বেগম জানান, ছোট বেলা থেকে শাহীন বিভিন্ন কিছু তৈরি করে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব আবিস্কার দেখতে লোকজন আসে।
গাইবান্ধা জেলা বিজ্ঞান ক্লাব এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ধীরেশ চক্রবর্তী জানান, শাহীনের এমন সাফল্যে খুশি ও গর্বিত স্থানীয় বিজ্ঞান ক্লাবের নেতৃবৃন্দ। স্বল্প খরচে অতি প্রয়োজনীয় ও সময় উপযোগি এসব আবিস্কারে শাহীনকে সহযোগিতা করলে মানুষের উপকার হবে।
২০২১ সালে নাকাইহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি ও বর্তমানে নাকাইহাট ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করছেন শাহীন। ২০২৩ সালে ৪৪তম বিজ্ঞান মেলাসহ জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় একাধিক পুরষ্কার পেয়েছেন শাহীন।
