পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও এসএসসি পরীক্ষার পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব মাহেদুল আলমকে এসএসসি পরীক্ষার নীতিমালা লঙ্ঘনের দায়ে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রটিতে মাহেদুল আলমের স্থলে একই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক রাজ্জাকুর রহমানকে কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর অগে, পরীক্ষাকেন্দ্রে নকল সরবরাহের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় এক সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এসএসসি পরীক্ষা (২০২৫) এর পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী কোন শিক্ষক অথবা কোন কর্মকর্তার ছেলে/মেয়ে/ পোষ্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের কোন কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে তিনি কেন্দ্র সচিব হতে পারবেন নাহ। কিন্তু পায়রাবন্দ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহেদুল আলমের মেয়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫ এ অংশগ্রহণ করলেও তিনি তথ্য গোপন করে নীতিমালা লঙ্ঘন করে কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, মাহেদুল আলমের মেয়ে মোছাঃ মিসরাত জাহান রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে দিনাজপুর বোর্ডের আওতাধীন বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এবারের এসএসসি ২০২৫ সালের পরীক্ষা দিচ্ছেন। যার রোল নং- ১৯০১৭১। সেই তথ্য গোপন করে এসএসসি পরীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম।
বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মাহেদুল আলমের কন্যা মিসরাত জাহান নামের শিক্ষার্থী ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আমার প্রতিষ্ঠানের ২০৯ নম্বর রুমে পরীক্ষা দিচ্ছে।
এবিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ সাহা জানান,আমার মেয়ে মিঠাপুকুর কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দেয়ায় আমি এবার কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করছি নাহ। এর আগে শুকুরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ও রাণীপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহেল কাফির সন্তান পরীক্ষার্থী থাকায় তারা কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব পালন করেনি। কেউ যদি তথ্য গোপন করে কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করে তাহলে তাকে কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিসহ পরীক্ষা পরিচালনা বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে পরীক্ষা আইনে কঠিন শান্তি নিশ্চিত করা উচিত।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুর এর উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ কামরুজ্জামান পাইকাড় জানান, সংশ্লিষ্ট বোর্ডের আওতাধীন কোন কেন্দ্রে সন্তান পরীক্ষার্থী থাকলে সেই ব্যক্তির ওই বোর্ডের আওতাধীন কোথাও কেন্দ্র সচিব হওয়ার কোন সুযোগ নেই। একই সাথে পরীক্ষা পরিচালনা বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউএনও/ডিসি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ জানান, মাহেদুল আলম তথ্য গোপন করে কেন্দ্র সচিব হওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা ছিলো না। বিষয়টি জানার পর তাকে কেন্দ্র সচিব এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সাংবাদিককে হুমকিসহ অন্যান্য বিষয়ে শোকজ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য এর আগে গত সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে ‘চুক্তিতে নকল সরবরাহের প্রতিযোগিতা এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে ওই কেন্দ্রের সচিব অধ্যক্ষ মাহেদুল আলম মুঠোফোনে সাংবাদিক খন্দকার রাকিবুল ইসলামকে হাটু ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেয়ার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। হুমকির কল রেকর্ড বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয় এবং ওই অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবি উঠে।
